বাংলাদেশের আলুর জন্য প্রসিদ্ধ জয়পুরহাট। কৃষকরা আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বাম্পার ফলনও বাড়ছে। দাম বেশি পেয়ে কৃষকরা ৪৫-৪৮ দিনের মাথায় আলু তুলছেন। পাইকারি বাজারে আলুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও খুচরায় বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলন আর দাম পেয়ে কৃষক খুশি। অন্যদিকে ভোক্তা পর্যায়ে কষ্ট বাড়ছে।
আলুচাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষাবাদে খরচ বেড়েছে, আবার লাভও দ্বিগুণ হচ্ছে। বর্তমানে যারা আলু উত্তোলন করছেন তারা সবাই লাভের মুখ দেখছেন। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে এবার দ্বিগুণ লাভ টিকছে। তিন-চার দিন আগে নতুন আলু প্রতি মণ (৪০ কেজি) ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই আলু গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। প্রথমদিকে দাম বেশি ছিল কিন্তু ফলন কম হয়েছে। এখন দাম একটু কমেছে কিন্তু ফলন বেশি হচ্ছে। গড়ে সমানই ধরা যায়। এই দাম থাকলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তারা ফলনের সঙ্গে মোটা অঙ্কের লাভের মুখও দেখবেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালাই উপজেলার ইমামপুর ও বেগুনগ্রাম মাঠ সদর উপজেলার ভাদসা, ক্ষেতলাল উপজেলার গোপিনাথপুরে কৃষকরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মাঠে সাদা সেভেন, বার-তের, ক্যারেজ, রোমানা, লাল পাকরি ও স্ট্রিক জাতের আলু তুলছেন।
বেগুনগ্রাম মাঠের চাষিরা জানান, যারা আলু তুলছেন তারা সবাই জমি থেকেই বিক্রি করছেন। কারণ পাইকাররা সরাসরি মাঠে আসছেন। এতে করে খরচও কম পড়ছে। গত দু’দিন ধরে সাদা সেভেন ও ক্যারেজ জাতের আলু প্রতি মণ (৪০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর লাল পাকড়ী বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এতে করে চাষিরা খুশি।
৩৮ শতক জমিতে আগাম জাতের সাদা সেভেন জাতের আলু চাষ করেছেন কালাই উপজেলার ডিংড়াপাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘রোপণের ৫১ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে ফলন হয়েছে ৫৫ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ১ হাজার ৮৫০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি প্রায় ১ লাখ টাকা। তাতে লাভ হয়েছে আনুমানিক ৬৫ হাজার টাকা।’
বেগুনগ্রাম মাঠের কৃষক খোকন বলেন, ‘আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানোসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমিসহ পরিবারের লোকজন মিলে। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। ২০ শতক জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৩০ মণ। ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে প্রায় ৩৯ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আলু বিক্রি করে এবার ভালোই লাগছে।’
পুনট কাঁচা বাজারে কথা হয় শিকটা গ্রামের আব্দুল কাফির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নতুন আলু ওঠার পর কখনও ৮০ টাকা কেজিদরে আলু ক্রয় করতে হয়নি। এবার বাজারের চিত্রই উল্টো। মৌসুম শেষে আলুর দাম বাড়তেই পারে কিন্তু শুরুতে কেন এমন হলো। আসলে আমরা বড় বেকায়দায় পড়েছি।’
আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আগাম জাতের আলু রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচামালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। আর মোকামগুলোয় আলুর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। বর্তমানে যে দামে আলু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে তা আসলে অস্বাভাবিক। পাইকারি বাজারেই ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজিদরে আলু ক্রয় করতে হচ্ছে। অথচ গত বছর এ সময় আগাম জাতের আলু ১৪ থেকে ১৬ টাকা কেজিদরে ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।’
কালাই পৌর বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী শফিকুল বলেন, ‘বাজারে বিভিন্ন জাতের নতুন আলু উঠেছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় তার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। জাতভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিদরে আলু বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বোর ৩৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ২২৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ বেশি হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে এই দাম থাকবে না। তবে গত বছর মৌসুমের শুরুতে যে দামে আলু বিক্রি হয়েছিল এবার সে পর্যায়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাইরের অনেক দেশই বাংলাদেশের আলু নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সবকিছু মিলে দেশ-বিদেশে এবার আলুর চাহিদা রয়েছে।’