তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় হুমকিতে যশোরের বোরো বীজতলা

85

তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে যশোরের বোরো বীজতলা। শীত যাই হোক না কেন তীব্র কুয়াশার কারণে বীজতলাগুলো হলুদ বা বিবর্ণ রং ধারণ করছে। কোথাও কোথাও কোল্ড ইনজুরিতে থেকে বীজতলা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে রাতের বেলা বীজতলা ঢেকে রাখছেন কৃষক। সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিললে পরে তুলে নিচ্ছেন তারা। তাপমাত্রা আরও কমলে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়বে বীজতলা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ঘন কুয়াশা পড়লেও তীব্র শৈতপ্রবাহ না হওয়ায় বোরোর বীজতলা তেমন ক্ষতি হবে না।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার উফশী জাতের ও হাইব্রিড জাতের ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর। তবে এরই মধ্যে কৃষক ৮ হাজার ৭৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে উন্নত পদ্ধতিতে ট্রেতে করে বোরোর বীজতলা করা হয়েছে ২৫ হেক্টর। এসব বীজতলা সবেমাত্র বড় হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শীত ও কুয়াশার কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে বোরোর বীজতলা।

তবে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, যশোরে কুয়াশার দাপট বাড়লেও শীতের তীব্রতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল যশোরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা দু-এক দিনের মধ্যে আরও কমতে পারে।

জেলার মনিরামপুর এলাকার কোদলাপাড়ার কৃষক সমসের আলী জানান, এ বছর বোরো আবাদের জন্য বীজতলা প্রস্তুত করেছেন তারা। তবে গত কয়েক দিনের কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলুদ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় তারা রাতের বেলায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছেন। তিনি বলেন, ‘শীত ও ঘন কুয়াশা যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে বীজতলা কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

একাধিক কৃষকরা জানান, গত আমন মৌসুমে খরচের তুলনায় ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে বোরোর আবাদ করে লাভের আশায় তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায়। কিন্তু চাষের উপযুক্ত সময়ে যদি বীজতলা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য।

তবে কৃষক তাদের বীজতলা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও কৃষি বিভাগ এ বিষয়ে এই মুহূর্তে বেশি চিন্তিত নয় বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার। তিনি বলেন, শীত ও কুয়াশা তীব্র হলে অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০-এর নিচে নামলে ধানের চারা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে যশোরে এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ১০-এর ওপরে আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, যশোরে এই মুহূর্তে ৭৫ হেক্টর জমিতে প্লেটে করে বিশেষ প্রযুক্তিকে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এসব বীজতলা ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। বাকি সাধারণ পদ্ধতিতে যে বীজতলা করা হয়েছে সেগুলোকে শীত-কুয়াশার কবল থেকে রক্ষা করতে কৃষককে দিনের বেলায় ক্ষেত থেকে পানি সরিয়ে রাতে সেচ দেয়াসহ সূর্য না ওঠা পর্যন্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য কৃষককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।