বসন্তের শুরুতে সাদা ফুলে সেজেছে সজনে গাছ

86

 

অত্যন্ত সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধক সবজি-খ্যাত সজনে। বসন্তের শুরুতে  মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সজনে গাছগুলো সাদা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুলের পরিমাণ এত বেশি যে, কিছু গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন সজনে গাছগুলো সেজেছে সাদা শাড়িতে। এবার গাছে গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছে তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব।

সজনে একটি আমিষ জাতীয় সবজি। সজনে প্রাচীনকাল থেকে গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরে মানুষের কাছে অতি পরিচিত সুস্বাদু সবজি। সাধারণত মাঘ মাসের শেষ দিকে এবং ফাল্গ–নের শুরুতে ফোটে সজনের ফুল। চৈত্রের শুরুতে কচি সজনের ডাঁটা খাওয়ার উপযোগী হলেও আষাঢ় মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। সজনে গাছ সব স্থানে লাগানো যায় যেমন, রাস্তার পাশ, জমির আইল, পুকুর ডোবার ও বাড়ির আশপাশে পতিত জায়গায় এর চাষ করানো যায়। সজনে পুষ্টিকর খাদ্য হওয়ায় এটি অর্থকরী ফসলও বলা হয়। এটি শুধু সুস্বাদু নয়, এর পাতা, ফল, ছাল থেকে বিভিন্ন ওষুধ হিসেবে ব্যবহƒত হয়।

সাহারবাটি গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মোকাদ্দেসুর রহমান জানান, তার বাড়ির আঙিনা ও জমিতে ২২টি সজনে গাছ আছে। সজনে গাছ থেকে আমরা ডাল সংগ্রহ করে সেই ডাল রোপণ করলে সেখান থেকে নতুন সজনে গাছ হয়ে ওঠে। শুধু সজনে ডাঁটা নয়, এর পাতার অনেক উপকার আছে। গেল মৌসুমে ফুল ঝরে পড়ার পরপরই ২২ হাজার টাকায় সেগুলো বিক্রি করে দেন। প্রতি কেজি সজনে ডাঁটা বিক্রি করা হয়েছিল ৪০০ টাকা থেকে ৪২৫ টাকা দরে। কচি ডাঁটার দাম কিছুটা কম থাকে। পুষ্ট হলে দাম বেশি ।

একই গ্রামের জাহিরুল ইসলাম জানান, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দু’চারটি সজনে গাছ রয়েছে। একেকটি বয়স্ক সজনে গাছ ফুল ফোটা অবস্থায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তার বাড়িতেও কয়েকটি সজনে গাছ রয়েছে।

জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কামরুজ্জামান খোকন জানান, তার বাড়ি ও পুকুর পাড়ে ২০টি সজনে গাছ রয়েছে। গাছে প্রচুর ফুল এসেছে। গাছের থেকে যে ডাটা আসে তা আমরা বাড়িতে খাই, আত্মীয়স্বজনকে দিই। এটা খেতে খুবই মজাদার। প্রতিবেশীরাও নিয়ে যায়। বাড়ির লোকজন বিক্রি করে। তবে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে সজনে গাছ রোপণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ জানান, সজনে খুব সুন্দর, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। এর পাতাও অত্যন্ত উপকারী। এটি পিত্তথলি, বাত ব্যথা, চিকন জর, শরীরের ব্যথাসহ অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যদি কেউ চিকন জ্বর, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকে ব্যথা অনুভব করে বিশেষ করে ডানদিকের ব্যথা সে ক্ষেত্রে সজিনা পাতার রস করে বা সেদ্ধ করে বা তরকারিতে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি অ্যাজমা এবং হাঁপানিতেও কাজ করে, তাই সব মিলে এদিকে ওষুধি গাছও বলা যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, উপজেলার বাণিজ্যিকভাবে কোনো সজনে বাগান নেই। বাড়ির আশপাশে পুকুর পাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠে এ গাছ। মৌসুমি এই দুই ধরনের সজনে আবাদ হয়ে থাকে। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সময় বাজারে সজনে বেশি পাওয়া যায়। এটি একটি উচ্চমূল্যের ফসল ও খুব কম যত্নের প্রয়োজন হয়। এটি যদি কোনো কৃষক চাষাবাদ করেন তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। সজনেকে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট, পাতা থেকে শুরু করে ফলের প্রত্যেকটি অংশ ব্যবহার করা যায়। কৃষক ভাইদের বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।