আমাদের দেশে গবাদিপশু পালন একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক পেশা। গবাদিপশু পালন করে অনেকেই তাদের বেকারত্ব দূর স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গবাদিপশু পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলোর মধ্যে গবাদিপশুর হঠাৎ খাওয়া কমে যাওয়া অন্যতম। আসুন জেনে নেই গবাদিপশুর খাওয়া হঠাৎ কমে গেলে কী করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন।
হঠাৎ খাওয়া কমে গেলে করণীয়:
খাদ্যে পরিবর্তন আসলে: প্রত্যেহ যে খাবারে প্রাণি অভস্ত হয় তার প্রতিই স্বভাবত বেশী অগ্রহ থাকবে। খাবার পরিমাণ টাও আগের মত নির্দিষ্ট থাকবে। এর বিপরিত অন্য কোন নতুন খাবার দিলে কম খাবে বা খেতে চাবেনা। কারণ তারও একটা মনস্তাত্তিক বিষয় কাজ করে। নতুন খাবার কী তার জন্য সত্যিই ভাল তাও হয়ত কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাদের পরিবর্তন হলেও এমনটা হতে পারে।
সমাধান:
নতুন ভাবে অভ্যস্ত হতে কিছুদিন সময় লাগবে। এতে চিন্তার কোন কারণ নাই।
তবে নতুন খাবার দেয়ার সময় সকল প্রাণিকে একসাথে প্রদান করলে দ্রুত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হতে পারে।
অন্যান্য রুচি বর্ধক খাওয়ানো যেতে পারে।
আগের খাবারের সাথে মিল রেখে কিছু খায়ানো ভাল।
ভয় পেলে:
ভয় পেলে এপিনেপ্রিন ও নর এপিনেপ্রিন হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়, তখন মানুষ এবং প্রাণি কেউই ভাল করে খেতে চায় না। আর প্রাণীর ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ। তাছাড়া ভয়ংকর কোন হিংস্র প্রাণি বা সাপ বেজি দেখেও গরু ছাগল ভয় পেয়ে যেতে পারে। আমরা অনেকে প্রাণীর সাথে খুব খারাপ আচারণ করি কোন একটু কিছু হলেই তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করি, এমনকি তার নাকে নাতা থাকলে সে দড়ি ধরেও তাকে টেনে কস্ট দেয়। এই রকম হলে ভয়ে প্রাণি খাবার কম খায়। তখন উলটো চিন্তায় পরে যায় কৃষক, খামারি তাই প্রাণীর সাথে শোভন আচারণ করা একান্ত অপরিহার্য।
সমাধান:
মার ধর করা হতে বিরত থাকা।
গায়ে হাত নেড়ে ভয় কাটানোর চেষ্টা করা।
পরিমাণ মত সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা।
অবস্থানের পরিবর্তন হলে:
বুদ্ধি সম্পর্ন যে কোন প্রাণীর ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। চিরচেনা স্থানে ও পরিবেশে তার সব কার্যক্ষমতায় ঠিক থাকে তেমনি খাবার পরিমাণ ও চাহিদাও।
প্রাণিতেও অবস্থান পরিবর্তন হলে কিছু সময়ের জন্য খাবার গ্রহনে ব্যহত হয় সেটা লক্ষ করা যায়।
বাজার থেকে কিনে আনলে, অন্য কোথায় নিয়ে গেলে এমন সমস্যা হয়। এর আরো একটা কারণ থাকতে পারে তা হল ধরুন আপনি তাকে কিনে নিয়েছেন কিন্তু জানেন না সে কোন টা বেশী পরিমাণে খায়, তাই হয়ত সেই উপাদান পায়নি তাই খাচ্ছেনা, বা কম খাচ্ছে।
সমাধান:
এই অবস্থাতে চিন্তার কিছু নেই। কয়েকদিনের ব্যবধানেই তা ঠিক হয়ে যাবে। তবে বেশী ধর্য্য না ধরলে একই খাবার বেশি না দিয়ে অনেক গুলো উপাদান অল্প অল্প করে দিবেন তাহলে একটা ভাল না লাগলেও অন্যটি খাবে। পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাড়াতে হবে।
সঙ্গি পরিবর্তন হলে
খামারে দীর্ঘদিন একসাথে থাকা গরু ছাগলগুলোর মধ্য থেকে তার জোড়াকে বিক্রি করলে বা অন্যত্র সরিয়ে রাখলে গরু ছাগল কম খায়। প্রথম কয়েকদিন এই অবস্থা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। আর সেই সময়ে খামারি মনে করেন যে হয়ত তার কোন রোগ হয়েছে। আসলে বিষয়টা তেমন নয়, এখানে তার কিছু মনস্থাত্তিক অবস্থান পরিবর্তন হয়।
সমাধান
কয়েকদিন দেখেশুনে রাখা এবং ভাল খাবার প্রদানের চেষ্টা করা।
বেশী বেশী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বাড়ালে ভাল হবে।
খাবার দুর্গন্ধ হলে
অনেক দিনের পচা, বাসি ও দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার সাধারণত খেতে চায়না গবাদিপশু। বাহ্যিক দৃষ্টিতে খাবারকে ভাল মনে হলেও শুধুমাত্র দুর্গন্ধ থাকার কারণে খায়না। এসব ক্ষেত্রে একবার মুখে নিয়ে আর খাবার মুখে নিতে চায় না কিংবা আর দেখেও না খাবারের দিকে।
সমাধান:
পচা খাবার না দিয়ে সুগন্ধ যুক্ত না হলেও যেন দুর্গন্ধ যুক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের সাথে কিছু লবণ পানি মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। খাবার তৈরি করার সময় হিসাব করে পরিমাণ মত বানাতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হলে গন্ধ ধরে না যায়।