তেলাপিয়া মাছ চাষে যেসকল সমস্যা দেখা দেয় ও তা প্রতিকার করার সহজ উপায়

87

তেলাপিয়া মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকার সম্পর্কে সকল মাছ চাষিদেরই জানা দরকার। মাছ চাষের ক্ষেত্রে তেলাপিয়া মাছের চাষ বেশ জনপ্রিয় ও লাভজনক। তবে তেলাপিয়া মাছ চাষ করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়। চলুন জেনে নেই তেলাপিয়া মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকার সম্পর্কে-

তেলাপিয়া মাছ চাষে সমস্যা ও প্রতিকারঃ
পুকুরে তেলাপিয়া মাছ চাষ করার আগে পুকুরের কিছু সাধারণ ব্যবস্থাপনা নেয়া অতীব জরুরী। তা না হলে তেলাপিয়া চাষ লাভের চেয়ে লোকসান হওয়ার আশংকা বেশি থাকে।নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

১। পুকুর প্রস্তুতির সময় যদি আগের বছরের পুরোনো তেলাপিয়া মাছ থাকে তাহলে বিষ প্রয়োগ করতে হবে ২ দিন। তা না হলে ১ম দিন বিষ দিলে শুধু বড় মাছগুলো মারা যাবে কিন্তু এদের মুখে ডিম থাকলে ডিমগুলো মারা যাবে না। পরবর্তীতে ৩ /৪ দিন পরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে পুকুরে আগে থেকেই নরমাল বাচ্চা পুকুর ভরে থাকবে, সেক্ষেত্রে ভাল মানের মনোসেক্স তেলাপিয়া পুকুরে ছাড়লেও লাভ হবে না।

কারণ আগে থেকেই সাধারণ পোনায় পুকুর ভরে আছে এবং সেখান থেকে বয়স পুর্ণ হওয়া মাত্রই বাচ্চা দেয়া শুরু করবে। সেক্ষেত্রে ভাল মানের মনোসেক্স পোনা দিলেও কোন লাভ হবে না অধিকন্তু শুধু শুধু হ্যাচারীর দুর্নাম সইতে হয় যে অমুক হ্যাচারীর পোনা ভাল না, আসলে মনের অজান্তে ঋনাত্বক কাজটি করলেন আপনিই।

২। আরেকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হল তেলাপিয়ার নির্দিষ্ট পরিমান উৎপাদন। প্রতিটি ১ শতাংশ পুকুর হতে এয়ারেটর দিয়ে চাষ করলে প্রায় ২০০ কেজি উৎপাদন হলেও সাধারন পদ্ধতিতে চাষ করলে ৫০ কেজির বেশী মাছ উৎপাদন হয় না। ৫০ কেজি মাছ ১ শতাংশে উৎপাদন হওয়ায় পর আপনি যতই খাবার দেন মাছ আর বড় হবে না, সে ক্ষেত্রেও সেই হ্যাচারীর দোষ যে অমুক হ্যাচারীর পোনা ভাল না।

ধরুন, শতাংশ প্রতি মজুদ ঘনত্ব দেয়া হল ২০০ পিস। প্রতিটি মাছ ২৫০ গ্রাম বা ৪ টায় কেজি হলেই শতাংশে উৎপাদন হয়ে গেল ৫০ কেজি। এখন আপনি যতই খাবার দেন না কেন মাছ আর খুব আর বড় হবে না। শুধু তাই নয় ৬ টায় কেজি আসার পর থেকেই তেলাপিয়ার growth কমতে থাকে। আর সে জন্য ৪ টা কেজি আসার সাথে সাথে মাছ বিক্রি করা ভাল। অধিক দামের অপেক্ষায় থাকা আরও বোকামী। বাজার মুল্য কম থাকার কারনে কেউ যদি নির্দিষ্ট ওজন আসার পরেও তেলাপিয়াকে অল্প অল্প খাবার দিয়ে সময় লম্বা করেন তাহলে শুধু শুধু উৎপাদন খরচ বাড়ল।

৩। তেলাপিয়ার সাইজের উপর বাজারমুল্যের তারতম্য হয়ে থাকে। এটা শুধু তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে নয় সব মাছের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই কম ঘনত্বে তেলাপিয়া চাষ করে বেশী ওজন আনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যেহেতু শতাংশে ৫/৬ মাসে ৫০ কেজির বেশী তেলাপিয়া উৎপাদন হয়না বা কম ঘনত্ব দিলেও এই ৫০ কেজি মাছই উৎপাদন হয়ে থাকে তাই কম ঘনত্ব দিয়ে বেশী ওজন আনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অথবা আরেকটা কাজ করা যাইতে পারে শতাংশ প্রতি ২০০ ঘনত্বে চাষ দিয়ে যখন ৫০ কেজি মাছ উৎপাদন হবে বা অন্য কথায় ৪ টা কেজি হবে তখন অর্ধেক মাছ বিক্রি করে দিয়ে বাকী অর্ধেক মাছ আর মাস দুয়েক রাখলে তা ২ টায় কেজি হয়ে যাবে অনায়াসে।

৪। তেলাপিয়ার খাদ্য প্রয়োগেও বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।তেলাপিয়া মাছের পাকস্থলী ছোট এ জন্য এই মাছকে অল্প অল্প করে দিনে ৪ বার খাবার দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছেকেউ যদি দিনে ২ বার খাবার দেন তাহলে ৪ বার খাবার দেয়ার তুলনায় growth কম হয়।

৫। তেলাপিয়ার চাষে আরেকটা বড় সমস্যা হল রাতের বেলায় অক্সিজেন ঘাটতি হওয়া যদিও অক্সিজেন ঘাটতিতে এইমাছ তেমন একটা মারা যায়না।
তাই তেলাপিয়া চাষ করতে হলে প্রথমেই পুকুরের অবাঞ্চিত মাছ মারতে হবে,৫০ কেজি মাছ শতাংশ প্রতি উৎপাদন হওয়ার পর পরই বাজারজাত করতে হবে,খাদ্য দিনে ৪ বার দিতে হবে।রাতের অক্সিজেন ঘাটতিতে রাত বারোটার পর পুকুরের পানি দিয়ে পুকুরেই সেচ দিয়ে অক্সিজেনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

৬। অবাঞ্ছিত পোনা দুর করার জন্য তেলাপিয়ার পোনা ১০০-১৫০/ কেজি হওয়ার পর পাবদা পোনা ছেড়ে দিলে শতাংশ প্রতি ৫০ টি।তাহলে কোন অবাঞ্ছিত পোনাই পুকুরে বাচঁতে পারবে না, খেয়ে সাবাড় করে রাখবে।