সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মিষ্টি রসালো কালো ও লাল আঙুর। সুতা ও বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা মিষ্টি এই রসালো ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি। ‘বিদেশি ফল আঙুর, দেশে চাষ করলে টক হয়’এমন ধারণাকে বদলে দিতে, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৮টি জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে আবাদ শুরু করেন তিনি। অবশেষে ৫ জাতের আঙুরের বাণিজ্যিক চাষে সফলতা পেয়েছেন।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যোগীহুদা গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের আঙুর বাগান করে পেয়েছেন এই সফলতা। বাংলাদেশে যে মিষ্টি ও সুস্বাদু আঙুর আবাদ করে সফলতা পাওয়া যায় তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন মহেশপুর উপজেলার প্রান্তিক কৃষক আব্দুর রশিদ মিয়া। এবার ৮০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্ল্যাক ম্যাজিক, বাইকুনুর, এ্যকুলো, জিকসন, ভ্যালেস, সিলভা ও কালো জাতসহ ২০০টির বেশি আঙুর গাছ লাগিয়ে এই সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানে আঙুরের গন্ধ, আকার, ওজন ও সুস্বাদু এবং ফলন ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকেরা আঙুর চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে প্রথম মিষ্টি আঙুরের চাষ শুরু করেন আব্দুর রশিদ। ১০ কাঠা জমিতে ছমছম, সুপার সনিকা ও কালো জাতসহ ৭৫টি আঙুর গাছ লাগিয়ে প্রথম বছরেই সফলতা পান। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, রশিয়া ও ইতালি থেকে সংগ্রহ করেন ছমছম, সুপার সনিকা আঙুরের চারা। এবার ২০২৩ সালে দুই বিঘা জমিতে ২০০টির বেশি ব্ল্যাক ম্যাজিক, বাইকুনুর, এ্যকুলো, জিকসন, ভ্যালেস, সিলভা ও কালো জাতের আঙুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানের আঙুর বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আঙুরের তুলনায় বেশি রসালো মিষ্টি ও সুস্বাদু এবং বিচি ছাড়া। যার ফলে অন্য চাষিরা আঙুর চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার বাগান থেকে ৩৫০-৩০০ টাকা কেজি পাইকারি দরে আঙুর বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে যোগীহুদা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এরিয়া নিয়ে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তার মাঝে কোথাও কমলা, বাদাম, কুল, সজিনা ও আঙুর বাগান গড়ে তুলেছেন আব্দুর রশিদ মিয়া। এসবের মধ্যে ৮০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন বিদেশি জাতের লাল ও কালো জাতের আঙুর বাগান। বিশাল সুতার জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন আঙুর বাগানটি। যেন বাইরে থেকে কোনো পাখি বা বাদুড় আঙুর খেতে না পারে। জাল সরিয়ে বাগানের ঠুকতেই দেখা মেলে থোকাই থোকাই ঝুলে আছে রসালো আঙুর। তার বাগানে দেখা মিলেছে কালো ও লাল আঙুরের। বাগানের সমস্ত কাজ খুঁটে খুঁটে দেখছেন আব্দুর রশিদ নিজে। অন্যদিকে বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে বাগান শ্রমিকেরা। এই আঙুর বাগানটি একনজর দেখতে প্রতিদিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে চাষি ও দর্শনার্থীরা।
কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, নিজের কাজের পাশাপাশি ৮ বছর ধরে এই বাগানে কাজ করি। এর আগে অন্য জাতের আঙুর চাষ করেছিল। সেগুলো মেরে দিয়ে নতুন করে কালো ও লাল রঙের আঙুর চাষ করেছে। এগুলো খেতে অনেক স্বাদ। প্রতিদিন বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। বাগান থেকে আঙুর খাওয়ার পর রশিদ ভাইয়ের কাছ থেকে অনেকে চারা কিনে নিয়ে যায়।
আঙুরচাষি আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, বাইরের দেশ থেকে আঙুর চারাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। চারাগুলো সংগ্রহ করে লাগানোর পর ১১-১২ মাস পরিচর্যা করে আজ এই ফলে পেয়েছি। প্রতি বছর বাইরের দেশ থেকে আমরা লাখ লাখ মেট্রিক টন আঙুর আমদানি হয়ে থাকে। যদি আমার মতো আরও উদ্যোক্তা আঙুর চাষে এগিয়ে আসে। তাহলে বাইরে থেকে লাখ লাখ টন আঙুর আনতে হবে না। এই আঙুর চাষ করে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। পাশাপাশি একদিকে যেমন আমাদের দেশ উন্নত হবে, সামনের দিয়ে এগিয়ে যাবে, অপরদিকে আমাদের আর্থিক অবস্থাও অনেক উন্নত হবে। যদি কেউ আমার বাগানে আসতে চান অবশ্যই আসবেন আঙুর খেয়ে যাবেন।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, আঙুর একটি উচ্চমূল্য ফল। আমাদের দেশে আঙুরের চাষ নেই বললেই চলে। কিন্তু আমাদের মহেশপুর উপজেলার যোগীহুদা গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়া নামে একজন কৃষক আঙুর চাষ করেছেন। তার আঙুর অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের। আমরা প্রতি বছর বাইরে থেকে যে আঙুর আমদানি করে নিয়ে আসি, তার চেয়েও বেশি মিষ্টি। উনার এই আঙুর বাগান করার ক্ষেতে আমাদের কৃষি বিভাগ সবসময় তার পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। যেহেতু উনার চাষ করা আঙুরের মান ভালো, তাই আমরা চাচ্ছি, এই আঙুরের আবাদ মহেশপুরের অন্যান্য ইউনিয়ন বা জেলার অন্য উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাই ছড়িয়ে দিতে। সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।