দিনাজপুরের হিলিতে ইরি-বোরো ক্ষেতে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। প্রচণ্ড দাবদাহের মাঝে শুরু হয়েছে বোরো ধানের কাটা-মাড়াই। ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক ও শ্রমিকরা। তবে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হলেও ধানের যে দাম রয়েছে তাতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। সার ও কীটনাশক থেকে শুরু করে পানি সেচসহ সবকিছুরই দাম বেশি। সে অনুযায়ী ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা।
শস্যভাণ্ডার-খ্যাত উত্তর জনপদের জেলা দিনাজপুরের হিলি-হাকিমপুরে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে যেসব কৃষক আগাম ধান রোপণ করেন তারা প্রথম দিকে ধান কাটা শুরু করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আবহাওয়া অনুুকূলে থাকায় প্রতিবিঘা (৩৩) শতক জমিতে ধান উৎপাদিত হয়েছে গড়ে ২০ থেকে ২২ মণ পর্যন্ত। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পানি, সার, কীটনাশক ও ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি বেশি। তাই উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে।
ডাংগাপাড়া গ্রামের কৃষক রহিম বলেন, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতিবিঘায় উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার টাকায়। এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে লাভ থাকছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বেশি লোকসানে পড়ছেন বর্গাচাষিরা। এতে তারা লোকসানে পড়ছেন বলে ধানের দাম বাড়ানোর দাবি কৃষকদের।
এদিকে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে দাম তাতে চার হাজার টাকা দিয়ে ধান কাটতে অনীহা প্রকাশ করছেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি, এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক লাগে পাঁচজন। এতে তাদের কোনো লাভ থাকে না, ধান কাটার মজুরি বাড়ার দাবি তাদের।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আরজেনা বেগম বলেন, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এই উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাত হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৬১৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ধানের উৎপাদন সম্ভাব্য ৫৪ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন। এতে চালের উৎপাদন হবে সম্ভাব্য ৩৬ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, মাঠে বোরো ধানের ফলন এখন পর্যন্ত ভালো আছে। বিভিন্ন চিকন জাতের ধান বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ মণ হচ্ছে। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ থেকে প্রতি শতকে এক মণ করে কৃষক ধান কাটা-মাড়াই করছেন। আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষক তাদের কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।