মেহেরপুরের গাংনীতে বৈরী আবহাওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের হিসাবমতে, ২০২৩ সালের বর্ষায় ৩৭ দিনে রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি। চলতি আষাঢ়ে ১০ তারিখ পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা একবারই ক্ষীণ। শুধু তা-ই নয়, চার বছর ধরে এ অঞ্চলে ক্রমেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। এতে তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরম বেড়েছে। বৃষ্টি কমায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষি তহশিন মেম্বর জানান, চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আউশ ধান এবং আড়াই বিঘায় মরিচ, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন। এসব চাষের খরচ কমিয়ে আনতে অন্তত দুই বিঘা জমির সবজি ক্ষেত উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বিগত দিনে বর্ষাকালের পানিতেই চাষিরা ধান-পাট ও সবজির আবাদ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে পানির দেখা মেলে না। পাট জাগ দেয়া পানির অভাবে অনেকেই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
কুলবাড়ি গ্রামের কৃষক শামসুল হক জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। আষাঢ় মাসেও বৃষ্টির অভাবে সেচ খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা তার। গত বছর পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দিতে না পারায় এ বছর মাত্র দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ভরা আষাঢ় মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। এমন হলে অনেকেই আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাবমতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট হাজার ৫০০ হেক্টর। এ পর্যন্ত আট হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছে। পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৬০০ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে আট হাজার ৮২০ হেক্টরে। এ ছাড়া সবজির আবাদ এক হাজার ৮৮৫ হেক্টর। এছাড়া রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, বৃষ্টির অভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার কৃষকের যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টির পানিতে ৭০ শতাংশ নাইট্রোজেন থাকে, যা মাছকে দ্রুত বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বছর কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হলে আউশ ধানসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এই কৃষিবিদ।
যুগিরগোফা বঙ্গ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী এলবার্ট বিশ্বাস জানান, তিনি ২০ বছর ধরে মাছের চাষে জড়িত। বর্তমানে তিনি পুকুর ও বিল মিলে ৫০০ বিঘা জমির পুকুরে মাছ চাষ করছেন। বর্সাকালে বৃষ্টির পানিতে পুকুর ও বিল ভরে ওঠে। সে সময় সেচের পানি লাগে না। এতে মাছ চাষের খরচ অনেকটা কমে যায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচনির্ভর হতে হচ্ছে।
জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কামরুজ্জামান খোকন জানান, তিনি ১০ বিঘা জমির পুকুরে মাছ চাষ করছেন। বছরের অন্যান্য সময় মাছ চাষে সেচ লাগলেও বর্ষাকালে লাগে না। বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভরাট থাকে। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গাংনী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহিদুর রহমান জানান, এ উপজেলায় দুই হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে পুকুরগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। বৃষ্টি বেশি না হওয়ায় মাছ উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাতে মাছ উৎপাদনে ২০০ শতাংশের বেশি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়ে যার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া নদী শুকিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।