বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কৌশল

5

বর্তমানে আমাদের দেশে খামার পর্যায়ে যত রকমের পোল্ট্রি প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে কোয়েল পাখির খামার।আগে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে কোয়েল পাখি।আমাদের দেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য বেশ উপযুক্ত।১১ টি পোল্ট্রি প্রজাতির মধ্য ক্ষুদ্র এই প্রজাতিটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে শুধুমাত্র তার অধিক উৎপাদনশীলতার জন্য।কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। সর্বপ্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা কোয়েলকে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানানোর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। পরবর্তীতে জাপান সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোয়েলকে একটি লাভজনক পোল্ট্রী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।ব্রয়লার শিল্পে ক্রমাগত ধস,উচ্চমূল্যের বাচ্চা,রোগের প্রকোপ আর খামারি পর্যায়ে নিম্নমূল্যের পাওয়ার কারনে এখন আমাদের দেশের অনেকেই ঝুঁকছেন কোয়েল খামারের দিকে।এই তালিকায় বেশিরভাগ রয়েছেন শিক্ষিত বেকার যুবক ও বিদেশ ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।তবে না জেনে-শুনে হুটহাট করে খামার করে অনেকেই পড়ছেন বিপাকে।তাই খামার করার আগে প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ,প্রশিক্ষণ আর জেনে বুঝে কাজে হাত দেয়া।

কোয়েলের জাত

প্রথমেই বলে নিই,আমাদের বাংলাদেশে কোয়েলের জাত-পাতের বালাই নাই।নির্দিষ্ট কোনো ব্রিডিং প্ল্যান না থাকায় আর ব্যক্তি পর্যায়ে যে যার মত করে ব্রিডিং করার কারণে কোয়েলের জাত হয়ে গেছে এখন পাঁচমিশালি।তবুও আমাদের দেশে প্রাপ্ত কোয়েলকে আমরা জাপানিজ কোয়েল বলেই চিনে থাকি। কারণ, জাপানেই কোয়েলকে সর্বপ্রথম গৃহপালিত করা হয়েছে। জাপানের হিসেব অনুযায়ী কোয়েলের কয়েকটি জাত এবং উপাজত রয়েছে, সেগুলো নিচে দেয়া হলঃ

লেয়ার জাতের কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান। এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠী হলো-· কমন জাপানিজ লেয়ার কোয়েল· ফারাও· ইংলিশ হোয়াই· ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন· ব্রিটিশ রেঞ্জ ইত্যাদি।এই জাতের কোয়েলকে শুধু ডিম প্রদানের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

ব্রয়লার জাতের কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যে ব্রয়লার জাত বিদ্যমান এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো-· জায়ান্ট জর্জিয়া বব হোয়াইট কোয়েল-এ জাতের কোয়েল প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে।· আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল· ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ইত্যাদি।এই জাতের কোয়েলকে শুধু মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।শুধুমাত্র জানার জন্য এই জাতগুলার নাম জেনে রাখুন। খুঁজতে গেলে বিপদে পড়বেন। কারণ আমাদের দেশে জাত-পাতের বালাই নেই -এটা আগেই বলে দিয়েছি।

কেন কোয়েল পালন করবেন?

অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে কোয়েল পালনের সুবিধা বেশি আর ঝুঁকি কম বলেই আপনি কোয়েল পালন করবেন।তো চলুন জেনে নেয়া যাক কোয়েল পালনের সুবিধাগুলো কি কি?

· কোয়েলের শারীরিক বৃদ্ধির হার বেশি।

· ৬-৭ সপ্তাহে বয়সে ডিমপাড়া শুরু করে।যদিও বাস্তবে আরো ৫-৭ দিন বেশি সময় লাগে। মানে জন্মের পর থেকে শুরু করে, ম্যানেজমেন্ট ও পরিবেশের উপরে নির্ভর করে মোট বয়স ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিন সময় লাগে ডিমে আসতে।

· বছরে গড়ে ২৫০-৩০০ টি ডিম পাড়ে ।

· একটি মুরগীর জায়গায় ৮ টা কোয়েল পালন করা যায়।

· ১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

· ডিমের পুষ্টিমান কোনো অংশে মুরগির ডিমের চেয়ে কম নয়।

· কোয়েলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।

· ডিমের উর্বরতার হার শতকরা ৮০-৯০ ভাগ।

· অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশী লাভ করা যায়।

· ডিমে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কম এবং প্রেটিনের ভাগ বেশি।

· কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশী।

· বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের উপযোগী।এদের খাদ্য চাহিদা কম অথচ, শারীরিক বাড় খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত বাড়তে পারে।