পেয়ারা ফলটি স্বাদ ও আকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ ফলের স্বাদের পরিধি মিষ্টি থেকে অম্ল টক পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ ফলের কস্তরির মতো গাঢ় গন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতে দেখতে পাওয়া যায়। এ রসালো ফলটির উপরের চামড়াটি দেখা যায় পাতার সবুজ রঙ্গের বলয় দিয়ে ঘেরা রয়েছে। এজন্য এ ফলকে বাংলাদেশের আপেল বলা হয়। এ ফলের আকার কখনো গোলাকৃতি আবার কখনো ডিম্বাকৃতি হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। পেয়ারার আকার সাধারণত ৪ থেকে ১২ সেঃ মিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে।
এ ফলের বাহিরের অংশের রং হালকা সবুজ থেকে গাঢ় হলূদ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া পেয়াারার ভিতরের শাঁসযুক্ত মাংসাল অংেশের পরিমাণ বিভিন্ন জাতে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এর রংও কোনো ফলে সাদা বা হলুদ আবার কোনো ফলে লাল বা গোলাপী হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। এ ফলের বীজগুলো শাঁসের সাথে খুবই দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকে। পেয়ারা ফলের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে হলুদাভ শক্ত বীজ থাকে। এসব বীজের আকার ৩ থেকে ৫ মি. মি. এবং এর সাথে একটি বাকানো ভ্রুণও দেখতে পাওয়া যায়।
পেয়ারা ফলটির মাংসাল অংশে এবং বীজে সাধারণত শতকরা ৮০ ভাগ পানি, এক ভাগ আমিষ, ১৩ ভাগ শ্বেতসার এবং প্রায় ৬ ভাগ আঁশ থাকে। এছাড়া পেয়ারা ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এতে ভিটামিন-সি পাওয়া যায় ১৪৬ থেকে ৪৯২ মিঃ গ্রঃ পর্যন্ত যার গড় পরিমান প্রায় ২৬০ মিঃ গ্রাম। ভিটামিন-সি ছাড়াও পেয়ারাতে ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, লোহা এবং ফরফরাস ও অনেক পাওয়া যায়। পেয়ারা ফলের ভিতরে শাঁসালো অংশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন। তা দিয়ে বীজগুলো ছাড়ানোর পর এ থেকে জ্যাম, , জেলি এসব তৈরি করা যায়।
এছাড়া পেয়ারার পাতার অনেক ভেষজগুণ ও রয়েছে। পেয়ারা পাতা সাধারণত ডায়রিয়া রোগের প্রতিষোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় পেয়ারা পাতা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রং শিল্পেও ব্যবহৃত হয়। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava এবং এ ফলটি Myrtaceae পরিবার ভুক্ত। পেয়ারা আমাদের গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এলাকা বিশেষ করে বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলসমূহের মোট আবাদকৃত জমি ও মোট উৎপাদনের পরিমান বিশ্লেষণে পেয়ারার অবস্থান রয়েছে পঞ্চম স্থানে। বিগত কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষ পুস্তিকা- থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে পেয়ারার আবাদকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ২৪.৫১৫ হেক্টর এবং এর সর্বমোট উৎপাদন হয় ৪৫.৯৯০ মেট্রিক টন।
উৎপত্তি ও বিস্তার: আমেরিকা মহাদেশের উষ্ণ তাপযুক্ত এলাকা পেয়ারার উৎপত্তিস্থান বলে চিহ্নিত। সাথে সাথে অষ্ট্রেলিয়ার উষ্ণ অঞ্চলেও বিভিন্ন জাতের পেয়ারা হয়ে থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, আমেরিকা মহাদেশ থেকে প্রাচীনকালের নাবিকদের মাধ্যমে আমাদের দেশে পেয়ারা চাষের বিস্তার ঘটে থাকে। বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে পেয়ারার উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের সব জেলাতেই পেয়ারার আবাদ হয়। তবে এর মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম গাজীপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার উন্নতজাতের পেয়ারার ফলন বেশি হয়ে থাকে।
জাতঃ পেয়ারার জাত বিচারকালে যে বিষয়গুলোকে মুখ্য উপাদান হিসেবে ধরা হয় তাহলে বিভিন্ন গাছের বৃদ্ধি, ফলের উপাদন এবং এর সার্বিক গঠন প্রণালী। দেশে বিদেশে পেয়ারার প্রচুর জাত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব উন্নতজাতের আবাদ হয়ে থাকে, তা হচ্ছে কাঞ্চন নগর, স্বরূপকাঠি, মুকুন্দপুরি, লালশাঁক, কাজি পেয়াারা, বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা এসব। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএ আর আই) উদ্ভাবন করেছে কাজি পেয়ারা এবং বারি পেয়ারা-২ জাতটি এবং বঙ্গবন্ধু এস, এম, আর কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় (ইপসা) সালনা উদ্ভাবন করেছে ইপসা পেয়ারা জাতটি। এসব উন্নতজাতের পেয়ারা দেশের বিভিন্নস্থানে জাতভেদে খবই ভাল ফলন দিয়ে থাকে। এর মধ্যে এজন্য কাঞ্চন নগর জাতটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য আবাদ করতে সুপারিশ করা হয়েছ্ েএছারা কুমিল্লা ও বি, বাড়িয়া এলাকায় আবাদ করার জন্য স্বীকৃত দেয় হয়েচে মুকুন্দপুরি জাতকে। অপরদিকে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে চাষ করতে বলা হয়ে:েছ স্বরূপকাঠি জাতটিকে। তবে বাংলাদেশের সব এলাকাতেই বিশেষ করে লবণাক্ত অঞ্চল বাদে বি এ আর আই উদ্ভাবিত পেয়ারার জাত দুটি (কাজি পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২) আবাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
পেয়ারার জাতের গুণাবলি ও উৎপাদনঃ বাংলাদেশের উন্নতজাতের পেয়ারার গুণাবলি এবং উৎপাদন বৈশিষ্ট্য এ দেখানো হলো।
১। কাঞ্চননগর ১০৮.৬ ১৩১০ ১৪২.২৭
২। মুকুন্দপুরি ১০০.৮ ১০৯৫ ১১০.৩৭
৩। স্বরূপকাঠি ১১৬.৬ ১২২০ ১৩৬.১৫
৪। কাজি পেয়ারা ৩৬৬.৬ ৩৪৭ ১২৭.২২
৫। বারি পেয়ারা-২ ২৫০.১ ৪০৫ ১০১.২৫
মাটি ও আবহাওয়াঃ পেয়ারা ফলটি বেশ জলবায়ু সহনশীল। এছাড়াও এ ফলের খরা সহিষ্ণুতা ও লবনাক্ততা সহ্য শক্তি রয়েছে। পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা যুক্ত উর্বর দো-আশ পলিমাটি পেয়ারা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
সারণি-১ঃ উন্নতজাতের পেয়ারার গুণাবলি ও উৎপাদন
জলাবদ্ধতা পেয়ারার আবাদের জন্য ক্ষতির করণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া এ ফলটি অম্ল বা ক্ষার এ উভয় ধরনের মাটিতেই ভাল ফলন দিয়ে থাকে।
উষ্ণ বা নাতিশীতোষ্ণ উভয় অঞ্চলেই পেয়ারার আবাদ ভাল হয়ে থাকে । এছাড়া পেয়ারা ফলটি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে শুরু করে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায়ও আবাদ করা যায়। যেসব এলাকায় বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০০ মি. মি. থেকে ২৫০০ মি.মি. পর্যন্ত সেসব জায়গা এমনকি ৩৫০০ মি. মি. থেকে ২৫০০ মি.মি পর্যন্ত সেস্ব জায়গা এমনকি ৩৫০০ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয় এমন এলাকাতেও পেয়ারার আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়া পেয়ারার আবাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা থাকতে হবে ২৩ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগেডের মধ্যে। তবে পেয়ারার চারা বা ছোট ছোট গাছ খরা ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। পেয়ারা ফল গছের ফুল ধরা এবং ফলের বৃদ্ধির সময় শুনো আবহাওয়ার প্রয়োজন হলেও, ফলের বৃুদ্ধকালে তাপমাত্রার আধিক্যতা আবার কখনো ফল ঝরার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। এছা ফল বৃুদ্ধর প্রাক্কালে অনেক সময় আর্দ্র আবহাওয়ায় ফলের মিষ্টতাও হ্রাস পায়।
বংশ বিস্তার: পেয়ারার বীজ বা কলমের চারা ঊভয় পদ্ধতিতেই গাচের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। বীজ থেকে যেসব গাছ হয় , সেগুলেঅতে সাধারণত দেরীতে ফুল আসে। এছাড়া এ সব রোগে বিভিন্ন আকারের বা বিভিন্ন ধরনের ফল ধরে। তবে এ ধরনের গাছগুলো বেশির ভাগই দীর্ঘজীবী হয়ে থাকে। সাধারণত বীজতলায় বা পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদনের জন্য চলতি বৎসরের সম্পূর্ণ পরিপক্ব বীজ ব্যবহার করতে হয়। এরপর এসব চারা গাছে যখন ৬ থেকে ৮টি পরিপক্ব্ পাাতা থাকে, তখন তা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
গাছে কলম তেরির মাধ্যমে চারা করা হলে সেসব গাছের মাতৃ গুণাগুণ পুরোপুরি বজায় থাকে। এছাড়াও কলমের গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে, আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় আবার অপরদিকে গাছ ছোাট থকে। বেশ কয়েকটি কলম পদ্ধতিতে পেয়ারার চারা ুৎপাদন করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
ক) কাটিং বা অঙ্গচ্ছেদন পদ্ধতি- এটি সবচেয়ে সহজ বা সরল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সব আবহাওয়াতেই গাছ থেকে কাটিং করা সম্ভব। তবে এর উন্নত কৌশল বের হবার কারণে বর্তমানে এ পদ্ধতিটি খুব বেশি কার্যকর নয়।
খ) লেয়ারিং বা গুটি কলম পদ্ধতি- এ পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃগােছের ডালে শিকড় গজানো হয় এবং তা সময়মত আলাদা করে অন্যত্র রোপণ করা হয়। পেয়ারার আবাদের জন্য এ পদ্ধতিটি বর্তমানে খবই জনপ্রিয়। সাধারণত বর্ষাকারৈই অন্যান্য সমেেয়ের চেয়ে এভাবে চারা উৎপাদনের জন্য উত্তম।
গ) গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতি- জোড়কলম পদ্ধতিটি ব্যবহার করে বর্তমানে আরো একটি উন্নত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে এ থেকে প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগ সুফল পাাওয়া যায়। তাবে এসবের মধ্যে ক্লেফট গ্রাফটিং করা খুব বেশি সহজ ও সরল।
চাষ পদ্ধতি- জমিতে চারা রোপণের জন্য খুবই ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। এরপর চাষ করা জমিতে পেয়ারার চারা রোপনের জন্য গর্ত বা গিট তৈরি করতে হয়। প্রতিটি গর্ত থেকে গর্তের দুরত্ব থাকবে ৫-৬ মিটার। এর পর প্রতিটি গর্তের চওড়া রাখতে হবে ৬০ সে. মি. হিসেবে এবং গভীরতা রাখতে হবে ৪৫ সে; মিটার করে। চারা রোপণের জন্য এভাবে গর্ত তৈরি করে নিয়ে এসব গর্ত প্রায় ১৫-২০ দিন পর সার মিশানো মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। প্রতিটি গর্ত এসব সার সহ মাটি দিয়ে ভরাট করার প্রায় ১০ ১৫ দিন পর এতে চারা রোপণ করতে হয়। এসব গর্তে যেসব সার মিশানো মাটি দেয়া হয়। তাহলো ১০-১৫ কেটি গোবর, ১-২ কেজি খৈল এবং ০.৫ কেজি পটাশ। পেয়ারার চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচেছ বর্ষার শুরতে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে তবে চারা শ্রাবণ মাসে পর্যন্তও রোপণ করা যায়।
জৈব ও রাসায়নিক সার পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, পেয়ারা গাছে জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে ভাল ফলন দিয়ে থাকে। গাছে সার প্েরয়াগ করা হলে শুধুমাত্র পেয়ারার উৎপাদনই বৃদ্ধি হয় না এ সাথে ফলের গুণাগুণও উন্নত করে। প্রতি বছরেই পেয়ারা গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে এসব সার দু কিস্তিতে প্রতি বছরে দু’বার হিসেবে প্রতি গাছে প্েরয়াগ করতে হবে। বছরে এভাবে প্রয়াগের নিয়ম হচ্ছে প্রথম অর্ধেক সার প্রয়োগ করতে হবে চৈত্র -বৈশাখ মাসে এবং বাকী অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে শ্রাবণ ভাদ্র মাসে। প্রতি গাছে সার প্রয়াগের আগে গাছের চার পাশে কোদাল বা ছোট লাঙ্গল দিয়ে জমি কুপিয়ে নিতে হবে। তারপর এভাবে শিকড়ের চারপাশের মাটির সাথে এ সার মিশিয়ে মাটিতে সেচ দিয়ে দিতে হবে। দসার ব্যবহারের বাৎসরিক মাত্রাঃ বছর প্রতিটি পেয়ারা গাছে সুপারিশকৃত জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার।
পরিমান সারণি-২ বছরওয়ারি জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগমাত্রা
উৎস: প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, জুলাই/ ২০০২, সমম্বিত উদ্যান ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প, খামার বাড়ি।
পেয়ারা গছে থেকে যে বছর নতুন শাখা গজায় তাতেই ফু-ফল ধরে। এজন্য গাছে যেনো নতুন গাল ঠিকতো গজায় এবং সেসাথে এসব ডালে যাতে বেশি বেশি ফুল আসে সেদিকে লক্ষ্য রাকতে হবে। তবে ফুল ধরার অন্তত একমাসে আগে গাছে সার প্রয়াগ করতে হয়।
পানি সেচ ঃ জমিতে চারা রোপণের প্রথমদিকে পেয়ারা গাছে ৮-১০ বার সেচ দিতে হয়। পেয়ারা গছে চৈত্র -জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রতি সপ্তাহেই এ সেচ দেয়া প্রয়াজন। এভাবে সেচ দেয়া হলে এতে গাছের ফল ঠিকমতো ঘরে এবং সাথ সাথে ফল ঝরাও রোধ হয়। গাছে এভাবে সেচ দেয়া হলে শীত মৌসুমে পেয়ারা ফল আকারেও বড় হয়।
পোকামাকড় ও এর দমন: পেয়ারা গাছ ও ফল পোকা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে মাছি পোকা ফলের গা ছিদ্র করে সেখানে ডিম পাড়ে। পরে ডিম থেকে মাছির কীড়া পেয়ারা ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে। এভাবে মাছি আক্রান্ত ফলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার হিসেবে কিটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করা হলে এ পোকা দমন করা যায়। এ জন্য যেসব কীটনাশক ছিটানো হয়, তাহলো রক্রিয়ন. পারফেকথিয়ন মার্শাল/ এজেড্রিন/ নুভাক্রন এসব। মিলিবাগের আক্রমণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া পাতাও ঝরে যায়। এ পোকা দেখতে অনেকটা সাদা তুলার মত এরা পাতার সাথে জড়িয়ে থকে এবং এ থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি লিটার করে ডায়াজিনন ৬০ ইসি ভালভাবে স্প্রে করতে হয়।
রোগবালাই দমন: পেয়ারা গাছ পোকা মাকড় ছাড়া রোগবালাই দিয়েও আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ্যান্থ্রাকনোজ পেয়ারা গাছের একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে ডায়াথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫৪ গ্রাম অথবা টিল্ট প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি লিটার হারে ¯েপ্র করা হলে এ রোগ থেকে গাছকে বাঁচানো যায়। এছাড়া উইল্টা ঢলে পড়া রোগেও অনেক সময় পেয়ারা গাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা বাদামি রং হয়ে পুরো গাছ ঢলে পড়ে। এ ছাড়া কান্ডের রং এর পরিবর্তন হয়। পরে আস্তে আস্তে গাছ মারা যায়। এটা একটা মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের এখনো কোন ভাল দমন ব্যবসথা নেই। এজন্য গাছ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তা তুলে নষ্ট করে ফেলা ভাল।
গাছে ফুল ধরার নিয়ম: পেয়ারা গাছে সাধারণত বছরে দু’বার ফুল ধরে। একবার ধরে শ্রাবণ মাসে এবং আরেকবার ফুল ধরে পৌষ মাসের দিকে। বছরে পেয়াারা গাছে দু’বারই ফুল ধরে তবে এসময় গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হয়।
গাছের ফল হ্রাস করা: পেয়ারার অনেক জাত যেমন কাজি পেয়ারা বারি পেয়ারা-২ ধরনের জাতগুলো আকারে অনেক বড় এবং ওজনেও বেশি হয়। তাই গাছে এসব পেয়ারা ধরলে সময় মতো গাছ থেকে কিছু পেয়ারা ফেলে দিতে হয়। এতে পেয়ারার আকার বড় হবে। এছাড়া সে সাথে অতিরিক্ত ফল ধরার কারণে গাছের ভেঙ্গে পড়া এবং গাছ বাকানো রোধ হবে।
গাছে ফল বেঁধে দেয়া: পেয়ারা ফলকে রোগ বালাই বা পোকা মাকড় থেকে রক্ষা করতে হলে ফলকে প্রাথমিক অবস্থায়ই বেঁধে দিতে হয়। এতে ফল তার সুবিধামতো ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয। সাধরণত বাদামি রংয়ের কাপড় দিয়ে পেয়ারা ফলকে এভাবে বেঁধে রাখতে হয়।
পেয়ারা ফল সংগ্রহ: সাধারণত পেয়ারা পাকার সময় ফলের রং এর পরিবর্তন হয়। এসব ফলের রং হলদাভ সবুজ থেকে হলুদ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এধরণের রং ধরার সময়েই গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
পেয়ারার উৎপাদন: পেয়ারা চারা রোপণের ১-২ বছরের মধ্যেই গাছে ফল দিয়ে থাকে। এছাড়া পেয়ারা প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত গাছে ভাল ফলন দিয়ে থাকে। পেয়ারা গাছে ফুল আসার পাঁচ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফল সংগ্রহের সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে ফল মাটিতে না পড়ে। এতে গাছ থেকে ভাল ফল সংগ্রহ করা সহজ হয়।