নীলফামারীতে লাউ চাষে কৃষকের মুখে হাসি

3

বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষে নীলফামারীর কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। অন্যান্য সবজির তুলনায় লাউ চাষ অল্প খরচে অনেক লাভজনক বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বার ছয় উপজেলায় ২ হাজার ৪১৮ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ১৮০ হেক্টর, ডোমারে ২৮০, ডিমলায় ২৬০, জলঢাকায় ১৬৩, সৈয়দপুরে ৮৫ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।

স্থানীয় চাষিরা জানায়, সারা বছর বাড়ির আশপাশে ও উঁচু জমিতে অল্প জায়গায় লাউয়ের চাষ বাড়তি ফসল হিসেবে দেখছেন চাষিরা। কারণ সামান্য জৈবসার দিয়ে বাড়ির উঠানে অথবা কৃষি, অকৃষি জমিতে বিনা খরচে হাজার হাজার টাকা আয় করা যায়। সূত্র জানায়, এটি একটি কৃষকের বাড়তি ফসল হিসেবে ধরা হয়। সার নেই, সেচ নেই, নিড়ানির খরচ নেই তবুও প্রতি বিঘায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত লাউয়ের ফলন পাওয়া যায়। তাই লাউ চাষ পুরোটাই লাভজনক একটি ফসল। অনেকেই সাথি ফসল হিসেবেও চাষ করে থাকেন। এর ঝড়ে পড়া পাতা ও ফুল লাউয়ের জমিতে জৈবসারের কাজ করে ও মাটি উর্বর রাখে। স্বল্প সময়ে উৎপাদিত এই সবজির চাষ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গ্রামের অনেক কৃষক লাভবানও হয়েছেন।

সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক পরিমাণে উন্নত জাতের মার্টিন লাউ (লম্বা কলসের মতো) শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষ হয়েছে। মাঠজুড়ে বাড়ির পাশে উঁচু জমিতে মাচায় ঝুলছে নানা রঙের শত শত লাউ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এখানকার উৎপাদিত লাউ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এদিকে উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা গ্রামের লাউ চাষি তহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এবার আশ্বিন মাসের শুরুতে এক বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছি। মাচায় ফুল ফল দুটোয় ভালো হয়েছে। এসব লাউ শীতকালীন সবজি হিসেবে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাউ বিক্রি করে লাভবান হতে পারব। এখন পর্যন্ত ১৫০ পিস লাউ বিক্রি করেছি। আরও ২০০ থেকে ২৫০ পিস রেডি হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাজারে নিতে পারব। আশা করি, লাউ বিক্রি করে লাভবান হতে পারব।

একই এলাকার লাউচাষি মোনতাজ আলী বলেন, আমি এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছি। এতে সার, বীজ, সেচ ও নিড়ানি দিতে ব্যয় করতে হয়নি। শতকে ১২ থেকে ১৫টি লাউয়ের চারা রোপণ করেছি। গাছের গোড়ায় জৈবসার দিয়েই চাষ করেছি। এতে ফলনও হয়েছে বাম্পার। স্থানীয় পাইকারসহ আমি নিজেই প্রতি সপ্তাহে বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ লাউ বিক্রি করেছি। গাছ সবল ও তরতাজা রয়েছে। আগামী পৌষ মাস পর্যন্ত আরও এক হাজার পিস বিক্রি করতে পারব। প্রতি পিস আকার ভেদে পাইকারি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আশা করি, আবহাওয়া ভালো থাকলে লাউ বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারব।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ বলেন, মার্টিন লাউ চাষের জন্য এখানকার মাটি খুবেই উপযোগী। এবার সদরে ১ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি হিসেবে লাউয়ের চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা লাউচাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লাউ চাষে কৃষক লাভবান হতে পারবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, সবজি চাষে নীলফামারী সদর সু-নাম কুড়িয়েছে। এখানে হরেক রকমের সবজি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে লাউ একটি অন্যতম সবজি বা ফসল।

তিনি বলেন, জেলায় দুই হাজার ৪১৮ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়াও বাজারে লাউ ও শাকসবজির দাম ভালো থাকায় কুষকের মুখে হাসি ফুটেছে।