পটলের চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ

9

পটল একটি জনপ্রিয় উচ্চমূল্য সবজি। পটল খরিপ মৌসুমের সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে বাজারে যখন অন্যান্য সবজি কম পাওয়া যায় তখন পটল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া পটল চাষের উপযোগী। দেশের সকল এলাকাতেই পটল চাষ করা সম্ভব।

পটলের পুষ্টিগুণ
উচ্চ পুষ্টিমান ও বহুবিধ ব্যবহারের জন্য পটল সবার পছন্দের একটি সবজি। খাবার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পটলে রয়েছে ২.৪ গ্রাম প্রোটিন, ৪.১ গ্রাম শ্বেতসার, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ৭৯০ মা.গ্রা. ক্যারোটিন, ০.৩০ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-২, ২৯ মি.গ্রা. ভিটামিন সি, ২০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১.৭ মি.গ্রা. আয়রন, এবং ৩১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি।

পটল চাষে জলবায়ু
পটল গাছের দৈহিক বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। পটলের জন্য উচ্চতর তাপমাত্রা এবং অধিক সূর্যালোক প্রয়োজন হয়। বৃষ্টিপাতের আধিক্য ফুলের পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায় এবং ফলন কমে যায়।

পটল চাষে মাটি
পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি এবং বেলে দো-আঁশ থেকে দো-আঁশ মাটি পটল চাষের জন্য উপযোগী। পটল বেশ খরা সহিষ্ণু। তবে পানির ঘাটতি দীর্ঘায়িত হলে ফলন কমে যায়।

পটল চাষে পরাগায়ন
পটল চাষের ক্ষেত্রে কৃত্রিম পরাগায়ন একটি জরুরি বিষয়। চারা লাগানোর তিন মাসের মধ্যে পটলের ফুল আসতে শুরু করে। পটল একটি পরপরাগায়িত উদ্ভিদ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ফোটে। কাজেই পরাগায়ন না হলে পটলের ফলন পাওয়া যাবে না। পটলের পরাগায়ন সাধারণত বাতাস এবং কীটপতঙ্গের দ্বারা হয়ে থাকে। তবে জমিতে পুরুষ ফুলের সংখ্যা খুব কমে গেলে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করা প্রয়োজন হয়। পটল গাছে পরাগায়নের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ ফুল দরকার। একটি সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল তুলে নিন এবং পুংকেশর নির্বাচন করে ফুলের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলুন। তারপর প্রতিটি স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের মুন্ডু পুংকেশর দ্বারা আস্তে আস্তে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিন। এর ফলে গর্ভকেশরে পুংকেশর থেকে রেণু আটকে পরাগায়ন হবে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত ৭-৮টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা সম্ভব। তা ছাড়া পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে তা থেকে পরাগরেণু আলাদা করে পানিযুক্ত একটি প্লাস্টিক পাত্রে নিয়ে হালকা ঝাকি দিয়ে পরাগরেণু মিশ্রিত করে টিউবের মাধ্যমে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডের ওপর ২-৩ ফোঁটা ব্যবহার করেও পরাগায়ন সম্পন্ন করা যায়। এ পদ্ধতিতে পটলের ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়।

মুড়ি ফসল
পটল গাছ থেকে প্রথম বছর ফসল সংগ্রহ করার পর গাছের গোড়া নষ্ট না করে রেখে দিয়ে পরবর্তী বছর পরিচর্যার মাধ্যমে গুড়িচারা থেকে যে ফসল পাওয়া যায় তাকেই মুড়ি ফসল বলে।