খামারে কক মুরগি পালন করবেন যেভাবে

14

পালন তথ্যঃ
সোনালি ( কক ) জাতের মুরগির ক্ষেত্রে পালন কালীন সময় ৫৫-৬০ দিন।
৫৫-৬০ দিনে একটি মুরগি গড়ে ১.৫ কেজি খাদ্য গ্রহন করে।
৫৫-৬০ দিনে একটি মুরগির গড় ওজন ৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে।
নিয়মিত টীকা প্রদান করলে এবং খামার পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ-বালাই আনুপাতিক হারে কম দেখা যায়। সোনালি (কক) জাতের মুরগির ক্ষেত্রে এখনো কোন মহামারী পরিলক্ষিত হয়নি ।
ব্রয়লার মাংসের প্রতি অনেকের অনীহা থাকলেও সোনালি মুরগির মাংসের চাহিদা ব্যাপক। বাজার দরও বেশ ভালো।

ব্রুডিং ব্যবস্থাপনাঃ
বাচ্চা আসার তিন ঘন্টা থেকে আসার পর প্রথম ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত করনীয় ব্রুডারের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন লিটার পেপার, চিকগার্ড, পানি, হোভার, খাবারের পাত্র সব তিন ঘন্টা আগেই বসিয়ে নিতে হবে যথাযথ জায়গায়।
হোভারের লাইট দুই-তিন ঘন্টা আগেই জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং একঘন্টা পর থার্মোমিটারের রিডিং পরীক্ষা করতে হবে।
বাচ্চা আসার ১০ মিনিট আগেই পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে।
বাচ্চা দুর্বল থাকলে পৃথক করে গ্লুকোজের পানি ফোটায় ফোটায় খাইয়ে দিতে হবে। বাচ্চা সবল থাকলে প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র জীবানুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। বাচ্চা দুর্বল থাকলে গ্লুকোজের পানি দিতে হবে।
বাচ্চা আসার ১০ মিনিট পর খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্র শুধুমাত্র প্রথমবার পেপারে ছিটিয়ে দিয়ে পরে অবশ্যই ট্রেতে খাবার দিতে হবে।
বাচ্চার অবস্থা ৩ ঘন্টা পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে দেখতে হবে তাপ বেশী হচ্ছে কিনা। কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করতে হবে এবং বাচ্চা মৃত থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। খাবার পানি শেষ হলে খাবার পানি দিতে হবে। পেপার ভিজে গেলে পাল্টে দিতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পেপার সম্পূর্ন ভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে।

ডিম উৎপাদনে সোনালি মুরগীঃ
বানিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালি মুরগি পালন করা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। বানিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালি মুরগি পালন করতে গেলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হলো “ইনব্রিডিং”। এই সমস্যার কারনে মুরগির ফার্টিলিটি হ্রাস পায়। ফলে ডিম উৎপাদনের হার কমে যায়। বানিজ্যিক ভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালি মুরগি পালনে পরামর্শগুলি মনে রাখা প্রয়োজন।

প্রথমে এটাকে বিজনেস মনে করতে হবে। শখের বসে মুরগি পালন করতে গেলে লাভের মুখ দেখা যায় না। তাই লেয়ার পালনের মত গুরত্ব দিয়ে সোনালি মুরগি পালন করতে হবে।
সোনালির ক্ষেত্রে ব্রুডিং কালে “এস্পারজিলোসিস” হবার প্রবল সম্ভবনা থাকে। তাই ব্রুডিং কালে লিটারে তুঁতের পানি ছিটিয়ে ব্রুডিং করা ভালো।
সোনালির ক্ষেত্রে খামারীদের ভ্যাকসিন করতে এক প্রকার উদাসীন ভাব দেখা যায়। ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালি মুরগি পালন করতে চাইলে ভ্যাকসিন করার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে লেয়ারের ভ্যাকসিনসূচি অনুযায়ী ভ্যাকসিন করতে হবে।
অবশ্যই সোনালি মুরগিতে ৭ থেকে ১০ দিনের মাঝে “বিক ট্রিমিং” ও ১০ থেকে ১১ সপ্তাহের মাঝে “ডিবেকিং” করতে হবে।
অন্যান্য বানিজ্যিক লেয়ারের মতই আলোক কর্মসূচি মেনে চলতে হবে।

৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মাঝে পুরুষ ও স্ত্রী সোনালি মুরগিগুলোকে পৃথক করতে হবে। সাধারনত মুরগি গুলোর ঝুটি ও পালক দেখেই পুরুষ ও স্ত্রী সোনালি মুরগি চেনা যায়। যেহেতু উদ্দেশ্য ডিম উৎপাদন তাই পুরুষ গুলো রাখার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। অতিরিক্ত পুরুষ সোনালিগুলো চাইলে বিক্রয় করতে পারেন আবার চাইলে পালন করতে পারেন। তবে পালন করতে চাইলে অবশ্যই পৃথক শেডে পালন করতে হবে।
১৪ থেকে ১৬ সপ্তাহে মুরগিগুলোকে খাঁচায় তুলতে হবে কারন সোনালি এমনিতেই কম উৎপাদনশীল তারপর ফ্লোরে পালন করলে প্রোডাকশন আরো হ্রাস পায়।

সোনালি মুরগি সাধারনত দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম খাবার গ্রহন করে। অতিরিক্ত বা কম খাবার দেয়া কোনটিই ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ডিম পাড়া অবস্থায় মোট খাদ্যের ৪০% খাবার সকালে দিয়ে বাকি ২০% দুপুরে ও ৪০% খাবার বিকেলে দেওয়া যেতে পারে।
২০ সপ্তাহ বয়সে মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে তখন মুরগিগুলোকে ৭ থেকে ১০ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। যে মুরগিগুলো ডিম দিচ্ছে না সেগুলোকে “cull” বা বাতিল করতে হবে। এতে একদিকে খাদ্য খরচ কমবে অন্যদিকে শতকরা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
প্রতি ৪৫-৬০ দিন পর পর কৃমিনাশক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।