[su_slider source=”media: 4504,4505″ title=”no” pages=”no”] [/su_slider]
সেখ জিয়াউর রহমান, রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সূর্য বেগমের বাড়ি। বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি পায়রাবন্দ গ্রামে তার বসবাস। ইতোমধ্যে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হন। নারী হয়েও পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে ছিনিয়ে আনেন এ স্বর্নপদক। তার বাড়িতে ঢুকতেই ডান পাশে প্রথমেই চোখ পড়ে ‘মিনি পুকুরে মাছ চাষ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড। সেখানে চাষ করেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সূর্য বেগম বলেন, এখান থেকে যে পরিমাণ মাছ পাই তা দিয়ে আমার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে পারি। একটু সামনে গিয়ে দেখা মেলে তিন স্তর বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর। তাকিয়ে দেখা যায় এক আজব ব্যাপার, সেখানে প্রথম স্তরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর, দ্বিতীয় স্তরে কোয়েল পাখি এবং নিচের স্তারে আছে হাঁস। সূর্য বেগম জানান, এখানে যেসব কবুতর আছে তা উন্নত জাতের। এক জোড়া কবুতর ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়। কোয়েল পাখি এবং হাঁসের রোগবালাই কম হয় বলে এটা লাভজনক ব্যবসা। কোয়েল পাখি এবং হাঁসের ডিম বাড়ি থেকে পাইকাড়রা কিনে নিয়ে যায়। তিন স্তর বিশিষ্ট ঘরের পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ আবস্থায় আছে বিভিন্ন প্রজাতির মসলা ও ওষুধি গাছ। ঘরের দক্ষিণ দিকে ৫০ শতক জমিতে রোপণ করেছেন রেড লেডি জাতের পেঁপের চারা। পেঁপের গাছে ফুল আসেছে। বাড়ির চার পাশে যেদিকে চোখ যায় শুধু সজিনার গাছ আর গাছ। থোকায় থোকায় সজিনা ঝুলছে। দেখতে কী এক অপূর্ব দৃশ্য! যেদিন সূর্য বেগমের সাথে কথা হলো সেদিন বিকাল বেলা যেসব গাছ থেকে সজিনা পেড়েছে তার পরিমাণ প্রায় তিন মন। তিনি জানান, এভাবে প্রতিদিনই গাছ থেকে সজিনা পাড়েন। তার ঘরে ঢুকতেই দেখা যায় ঘরের এক কোণে সজিনার স্তূপ। সেখানে ১ কেজি করে অনেক আঁটি বাধা সজিনা। প্রতিদিন সকাল বেলা সূর্য বেগমের স্বামী আজিজুল ইসলাম রংপুর সিটি বাজারে সজিনা বিক্রয় করেন। তিনি আশা করেন এ বছর তিন লাখ টাকার সজিনা বিক্রয় করবেন। তার বাড়িতে গেলে মন জুড়িয়ে যায়। একটি বাড়ি একটি খামার আঙ্গিকে সাজিয়েছেন তার বাড়ি। তিনি বলেন, এ ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় আমার পক্ষে এসব করা সম্ভব হয়েছে। তাকে আমার পরিবারের একজন সদস্য বলে মনে হয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হয়েছি। এ পদক কৃষকের জন্য পেয়েছি। কৃষকরা আমাকে ভালবাসে বলেই আমি এ পদক পেয়েছি। শুধু আমি এ পদকে ভূষিত হয় নাই আমার কৃষকও এ পদক পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর রাস্তার দুই পার্শ্বে ও বিভিন্ন পতিত জায়গায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার সজিনার ডাল রোপণ করেছি। পায়বাবন্দ গ্রামের প্রতি বাড়িতে এখন ভার্মিকম্পোস্ট (কেঁচো সার)। এ ধরনের কার্যক্রম সামনের দিকে আরো এগিয়ে যাবে। এমন সূর্য বেগম যদি প্রতি বাড়িতে একজন করে তৈরি করা যায় তাহলে আমাদের কৃষি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।