সাইদ আরমান, বিশেষ প্রতিবেদক, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের পাশে দাঁড়াতে অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একটি ব্যাংকও ঋণের প্রবাহ বাড়ায়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশউপক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ব্যাংকগুলোর অনীহা দেখে, আবারও চিঠি দেয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, “অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আমরা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছি। তবে হ্যাঁ, ব্যাংকগুলোর কিছুটা অনীহা আমাদের পর্যবেক্ষণে পাওয়া গেছে। নতুন করে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে।”
জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে হাওরের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বলে।
ওই প্রজ্ঞাপনে রেয়াতি সুদে ঋণ দিতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিত রাখতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের ঋণ দিতে হবে। সহজ কিস্তি নিয়ে ঋণ নিয়মিত করা যাবে। এছাড়া চাইলে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। আর ঋণ নিতে এসে কৃষকরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার যাতে না হন, সেটি দেখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, যেসব কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে এবং নতুন করে কোনো মামলা দায়ের না করতে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু পালন ও গো খাদ্য উৎপাদনে চাইলে ঋণ নিতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রজ্ঞাপন জারির পর কোনো ব্যাংকই সন্তোষজনকভাবে ঋণ দেয়নি। একটি ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ পরিপালন করে ঋণ প্রবাহ বাড়ায়নি। বরং আগের ধারায় তারা ঋণ দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করছে।
বিষয়টি নিয়ে রোববার কথা হয় কিশোরগঞ্জের ইটনার কৃষক সুজাত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের কৃষক হিসেবে একটি পয়সাও ঋণ পাইনি। নানা ব্যাংকে গিয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ঋণের জন্য গিয়েছিলাম। পাইনি। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংকে গিয়েছিলাম। একই অবস্থা।”
ওই কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ পরিপালন করতে অভ্যন্তরীণভাবে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছি। ঋণের প্রবাহ বাড়িয়েছি। তবে দুএকটি ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
অপরদিকে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ বলেন, “আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক হারে ঋণ বিতরণ করা যাবে।”
অন্যদিকে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ব্রহ্মণবাড়িয়ার হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের পাশে দাঁড়াতে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিলেও তাতেও খুব বেশি সাড়া মেলেনি।
ফার্সমঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এসএ/এম