মাহবুব হোসেন, নাটোর থেকে: মধুমাস জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে এখন চলছে আষাঢ় মাস। নাটোরের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা আম, কাঁঠাল, জামসহ হরেক রকমের মৌসুমী ফল। তবে আমের রাজত্বটা সবচেয়ে বেশি।
আমের এই রাজ্যে এবার ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ ফল জামরুলের অবস্থানও কম নয়। গাছের ডালে ডালে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে লাল, সবুজ আর সাদা রঙের তরতাজা জামরুল। থাই, চায়না আর দেশি জাতের এসব জামরুলের বেশ চাহিদাও রয়েছে।
বাজারে গেলেই এখন টুকরি ভরা জামরুলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। হালকা মিষ্টি স্বাদের ফলটি অনেকেরই প্রিয়। তবে অনেকই বলেন, জামরুল খেতে পানসে হয়। এরপরও ভিন্ন স্বাদ পেতে জামরুল কিনতে ফলের দোকানে ভিড় করছেন মানুষ।
সরজমিনে দেখা গেছে, নাটোর শহরের বিভিন্ন ফলবাজার, অলি-গলি আর ছোট-বড় বাজারগুলোতে প্রতিকেজি জামরুল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। বাজারে আমদানি ও এর চাহিদাও রয়েছে বেশ ভালো।
শহরের ছায়াবাণী মোড়ে ফল কিনতে আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, “আম, লিচু আর কাঁঠাল খেয়ে হাপসে উঠেছি। এবার ভিন্ন স্বাদ পেতে জামরুল ফল কিনতে এসেছি।”
ফল ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিন গ্রাম থেকে ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে জামরুল কিনে এনে শহরে বিক্রি করেন। দাম ভালো, চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। লাভও ভালোই হয়। তার মতোই অন্তত ১০ জন জামরুল বিক্রি করেন নাটোর শহরে।
নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি জানান, জামরুল হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত রসালো গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। এ ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর তৃষ্ণা নিবারণে বেশ উপকারী। তবে ছোট্ট এ ফলটির পুষ্টিগুণ খুবই সমৃদ্ধ। এতে আছে ক্যালরি শক্তি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, খাদ্যআঁশ, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি নানা উপাদান। প্রতিদিন নিয়মিত একটি করে জামরুল খেলে মানুষের শরীরের পুষ্টিহীনতা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
তিনি বলেন, “যে বছর প্রকৃতিতে প্রচণ্ড রোদ পড়ে, সে বছর জামরুল হয় মিষ্টি। আর এর উল্টো হলে জামরুল খেতে পানসে হয়ে যায়। শরীরের নানা ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে জামরুলের জুড়ি নেই। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। ভিটামিন সি ও ফাইবার সমৃদ্ধ জামরুল হজমশক্তি বৃদ্ধি ও বদহজম দূর করে। জামরুলে থাকা উপাদান শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে।”
এছাড়া জামরুল ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও শরীরের বাত নিরাময়ে দারুণভাবে কাজ করে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, নাটোরে কি পরিমাণ জামরুল গাছ রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে গ্রামাঞ্চলে বসত বাড়ির আশেপাশে বা পুকুরের ধারে বিক্ষিপ্তভাবে এ ফলের দু’ একটি গাছ দেখা যায়। জায়গার অভাব হলে বাড়ির ছাদে হাফ ড্রামেও জামরুল গাছ লাগানো যায়।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম