মাহী ইলাহি, রাজশাহী থেকে: রাজশাহীর বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পেয়ারা চাষিরা। পেয়ারা চাষিদের ভরসা এখন আগামী শীত মৌসুম। বর্ষাতে স্বাদ না থাকায় পেয়ারা অনেকেই কিনছে না। চলছে আমের মৌসুম তার ওপর পেয়ারার স্বাদ কম উভয় মিলে বাজারে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার পেয়ারা আবাদ হয়েছে ৬ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে। কৃষকরা এতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এর পরও খরচ ওঠাতে না পারায় তারা এখন দিশেহারা। এখন প্রতি কেজি পেয়ারা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। এমনকি অনেকেই বাধ্য হয়ে ১৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করছেন। পাইকারি দাম আরো কম।
পেয়ারা চাষিরা জানান, গত কয়েকবছর ধরে পেয়ারা চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। দামও পেয়েছেন যথেষ্ট। লাভজনক হওয়ায় পেয়ারা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। অনেক শহরের মানুষও লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন। এতে তারা লাখ লাখ টাকা ব্যয়ও করছেন। কিন্তু পেয়ারার বর্তমান বাজার মূল্যে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। রাজশাহীতে এতো পেয়ারা হয়েছে যে গোটা রাজশাহীর বাজার এখন পেয়ারাতে সয়লাব।
দাম কম হলেও স্বাদ কম থাকায় পেয়ারা কম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে এখন সুমিষ্ট আম। তাই আম পাশে থাকলে পেয়ারা আর কে খেতে চায়। আমের প্রভাবে পেয়ারার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। অথচ কয়েক মাস আগে কেউ বাড়িতে খাবার জন্য, কেউ অতিথি আপ্যায়নের জন্য, আবার অনেক অফিস আদালতে মিটিং-সিটিং-এর জন্য পেয়ারা কিনেছেন ব্যাগ ভর্তি করে।
এখন যে পেয়ারা ২০ ও ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ওই পেয়ারা গত শীতেই ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। অনেকেই বলছেন, বর্ষা শুরু হওয়ায় পেয়ারার স্বাদ কমে গেছে। আর স্বাদ কমে যাওয়ায় পেয়ারার এই মূল্য পতন। পেয়ারা চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখন তাকিয়ে আছেন শীতকালের দিকে। পেয়ারা চাষিরা এখন বর্ষাকে ঠেলে পার করছেন লাভের আশায়। তারা অপেক্ষায় আছেন, কবে শীত আসবে আর দু’পয়সা লাভের মুখ দেখবেন।
পেয়ারা চাষি জব্বার আলী। তিনি এবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পেয়ারার মূল্য পতনে আমি খুবই চিন্তিত। তিনি এবার গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদিঘি মৌজাতে বাণিজ্যিক ভাবে ৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত কয়েকবছর ধরে পেয়ারাতে লাভ হচ্ছে জেনে পেয়ারা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তবে এবার পেয়ারার দাম পড়ে যাওয়ায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (শস্য) আবদুল আওয়াল বলেন, পেয়ারার এ মূল্য পতনে কৃষকের কিছুটা ক্ষতি হবে ঠিকই। তবে এ পেয়ারা শীত মৌসুমের জন্য। আগামী শীতকালে ঠিকঠাক আবাদ হলে এবং আবহাওয়া ভাল থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। আর পেয়ারার যে অগ্রযাত্রা তা অব্যাহত থাকবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম