ইমরান হোসেন, বরগুনা থেকে: বরগুনায় বর্ষা মৌসুমে বাঙ্গি চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন হানিফ নামে এক কৃষক। ধান চাষে বার বার লোকসান হওয়ায় তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলছেন হানিফ।
এদিকে হানিফের দেখাদেখি প্রতিবেশীরাও এখন এই বর্ষা মৌসুমে করছেন বাঙ্গির চাষ। তারা বলছে, এই সময়ে বাঙ্গি অনেক সুস্বাধু হওয়ায় বাঙ্গি চাষ করে তারাও হয়েছে লাভবান। তবে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো রকমের সহায়তা বা পরামর্শ কিছুই দিচ্ছে না দাবি কৃষকদের। যারা কৃষি কাজ করছেন না তাদের দিচ্ছেন কৃষি উপকরণ।
বরগুনার পাথরঘাটার ছোটট্যাংরা গ্রামের কৃষক মো. হানিফ হাওলাদার। কয়েক বছর আগেও অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটতো তার। এক একর জমিতে ধান চাষ করতেন তিনি। তবে নিম্ন এলাকা হওয়ায় লবণ পানিতে ধান চাষে বার বার লোকসান হতো তার।
দুই বছর আগে কিছু জমি বিক্রি করে ধান চাষের এক একর জমিতে মাছের ঘের তৈরি করেন তিনি। সেই টাকায় কিছুটা লাভ হওয়ায় ঘেরের ৪ শতাংশ জমিতে বর্ষা মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে বাঙ্গির চাষ করেন। বাঙ্গির ফলন ভালো হওয়ায় গত বছর এক একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেন হানিফ। বাঙ্গির ফলন ভালো হওয়ার পর বাজারেও বাঙ্গির চাহিদা দেখা দেয় হানিফের আশার থেকে বেশি।
ফলে গত বছরই লাভের টাকায় আরও চার একর জমি কিনে এ বছর বর্ষা মৌসুমে পাঁচ একর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন হানিফ।
বাঙ্গি চাষ করে স্বাবলম্বী হানিফের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “জীবনের অনেকটা সময় পার করেছেন অভাব-অনটনের মধ্যে। ৪০ বছরের জীবনে বার বার পেশা বদল করেছেন তবে বদলায়নি তার ভাগ্য। অবশেষে বাঙ্গি চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তবে এ কাজে তাকে কৃষি অফিস থেকে সার বা কৃষি পণ্য দেয়া তো দূরের কথা পরামর্শও দেয়নি তারা।”
হানিফ আরও জানান, যারা কৃষি পেশায় জড়িত না তাদের সার দিচ্ছে কৃষি অফিস, আর সেই সার তাদের কাছ থেকে কিনে ব্যবহার করছেন তিনি।
হানিফের দুই ছেলে সোহেল ও হেলাল লেখা পড়ার পাশাপাশি বাবাকে সাহায্য করছেন কৃষি কাজে। তারা বলেন, ধান চাষের থেকে অধিক লাভবান হওয়ায় তারাও নির্ধিদায় কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করছেন। তারা এক সময়ে দু’বেলা খাবার খেয়ে দিন কাটাতো, লেখাপড়া করার খরচ তাদের বাবা বহন করতে পারতো না। তবে এখন তারা স্বাবলম্বী।
এদিকে, হানিফের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন বর্ষা মৌসুমে বাঙ্গির চাষ করছেন এ এলাকার। তারাও বলছে এ মৌসুমে বাঙ্গির চাহিদা ব্যাপক ও ফলনও ভালো হয়।
হানিফের প্রতিবেশী মমতাজ বেগম ও মঞ্জু রানী জানান, গত বছর হানিফের দেখাদেখি তারাও বাঙ্গি চাষ করেছেন। তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন হানিফ নিজেই। তারা আগে বাড়িতে রান্না-বান্না করেই দিন কাটাতেন। তবে এখন বর্ষা মৌসুমে বাঙ্গির চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন তারা।
তবে এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইনুর আজম খান জানান, বর্ষা মৌসুমে উঁচু স্থানে বাঙ্গির ফলন ভালো হয়। যেকোনো কৃষক এ মৌসুমে বাঙ্গি চাষ করতে পারে। তবে সময়মত প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দেয়া হবে হানিফসহ ওই এলাকার কৃষকদের।
শুধু বাঙ্গি নয়, হানিফ এখন পাঁচ একর জমিতে বড়বটি, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, করোলা, ঝিঙাসহ নানান ধরনের সবজির চাষ করেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম