পরিবেশবান্ধব বায়ো-অর্গানিক সার উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীরা।
দশটি ব্যাকটেরিয়া, কাঁচা শাক-সবজির অবশিষ্টাংশ, রান্না ঘরের পচনশীল বর্জ্য, রক ফসফেট (শতকরা ৫ ভাগ) ও কার্বন উপাদান বায়োচার (শতকরা ১৫ ভাগ) মিশিয়ে তারা এ সার উদ্ভাবন করেছেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ধান চাষে ব্যবহারযোগ্য এ সার মাঠ পর্যায়ে আউশ, বোরো ও আমন মৌসুমে পরীক্ষা করা হয়েছে। আউশ মৌসুমে এ সার হেক্টরপ্রতি এক টন এবং বোরো ও আমন মৌসুমে দুই টন ব্যবহার করতে হয়।
পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি ব্যবহার করলে ধানের জমিতে পূর্ণ মাত্রার টিএসপি ও শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কম ইউরিয়া সার দিলেও ফলনে কোনো ঘাটতি হয় না।
তথ্য অনুযায়ী, ইউরিয়া ও টিএসপি সারের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়। তা ছাড়া ইউরিয়া ও টিএসপি উত্পাদনে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়। প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপি উত্পাদনে প্রায় সাড়ে ছয় কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে যুক্ত হয়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, টিএসপি অথবা ডিএপি সার তৈরির প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে রক ফসফেট, যার বাজার মূল্য কেজি প্রতি মাত্র পাঁচ টাকা। রক ফসফেট সহজে দ্রবীভূত হয় না বিধায় এটিকে ধানসহ বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদি ফসলে সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। মাটির অন্যতম উপাদান ফসফেট দ্রবণকারী ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই রক ফসফেটকে স্বল্প সময়ে দ্রবীভূত করে উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
উদ্ভাবিত বায়ো-অর্গানিক সার ধান চাষে ব্যবহারে একদিকে যেমন শতকরা ৩০ ভাগ ইউরিয়া সার ও পূর্ণ মাত্রার টিএসপি সারের ব্যবহার কমাবে, অন্যদিকে কাঁচা বাজারসহ রান্নাঘরের বর্জ্য দ্রব্যকে ধান চাষে জৈব সার রূপে ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা যাবে। পাশাপাশি মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
উদ্ভাবিত সারটির সঙ্গে শতকরা ১৫ ভাগ বায়োচার আছে বিধায় মাটিতে সরাসরি কার্বন যোগ করে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ক্রমাগত শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বসবাসকারী বাতাসের নাইট্রোজেন সংযোজনকারী ফসফেট, দ্রাবক ও অন্যান্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মাটির এসব অনুজীব উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ব্রিতে এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক ড. উম্মে আমিনুন নাহার, ড. যতীশ চন্দ্র বিশ্বাস, মো: ইমরান উল্লাহ সরকার ও আফসানা জাহান।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. যতীশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও নিচে। তাই এ ধরনের সার ব্যবহারের ফলে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া কৃষকদের উত্পাদন খরচ কমবে। সূত্র: ইত্তেফাক।
চুয়াডাঙ্গায় কৃষিকাজে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে
সিরাজগঞ্জের মৎস্য চাষিদের স্বপ্ন ফুরায় না
নাটোরে ১৪ লাখ কৃষককে প্রণোদনা প্রদান কর্মসূচি শুরু
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম