সিরাজগঞ্জের দুইবারের বন্যায় সাত উপজেলায় পুকুর-জলাশয়ের প্রায় ৬ কোটি টাকার মাছের ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মাছচাষিরা। সরকারি সহযোগিতা ও সুদমুক্ত ঋণ পেলে আবারও মাছ চাষের স্বপ্ন দেখবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত জুলাইয়ে প্রথম দফা বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলায় ২৪২টি পুকুর ভেসে যায়। এতে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয় ৮ লাখ টাকার। এছাড়া ১৫ লাখ টাকার পোনাসহ মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয় ৭২ লাখ ৭৭ হাজার টাকার। প্রথম দফার এই ধকল কাটিয়ে না উঠতেই আগস্টে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়েন সিরাজগঞ্জের মাছচাষিরা।
চলতি বছরের বন্যায় শত শত পুকুর ডুবে, পাড় ভেঙে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষির সংখ্যা প্রায় এক হাজার। বন্যায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন বাড়লেও বিপুল পরিমাণ চাষের মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলায় এবার মাছের ঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে ১ হাজার ৪১৩টি পুকুর ভেসে গেছে। পোনা মাছ ভেসে গেছে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। মাছ ভেসে গেছে ৩০৬ টন, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া পুকুরের পাড় ভেঙে যাওয়াসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে আরো ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার।
ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের আয়তন ৫৬৯ একর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮২০ জন চাষি। সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
তাড়াশের সফল মাছচাষি খায়রুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ১ একর জমি লিজ নিয়ে মৎস্য খামার তৈরি করেন। সেখানে ২ লাখ টাকার ওপরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু বন্যায় মৎস্য খামারের বাঁধ ভেঙে সব টাকার মাছ তলিয়ে গেছে নদী ও বিলে। তিনি এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান।
তাড়াশের বারুহাস গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান, স্বপ্ন নিয়েই মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। এ জন্য প্রায় ১ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগ করেছিলাম। আশা ছিল জৈষ্ঠ্য মাসে মাছ বিক্রি হলে কয়েক লাখ টাকা লাভ হবে। কিন্তু বন্যায় সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এ ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেব তা ভেবে পাচ্ছি না। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন জেলার মাছচাষিরা। এবার মাছের উৎপাদন অনেকখানি ব্যাহত হবে।
তিনি আরো বলেন, মাছ ভেসে যাওয়ার কারণে আগামী দুই মাস প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তীতে চাষকৃত মাছের উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে। যার কারণে সেই সময় জেলায় মাছের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
তবে মাছচাষীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতার জন্য এবং মাছের উৎপাদন ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান মনিরুল ইসলাম। সরকারি বরাদ্দ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাছচাষিদের পুনর্বাসন করা হবে। এতে করে মাছের ঘাটতি মেটানো সম্ভব বলে আশা করছেন তিনি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম