গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গবাদীপশু এখন গাইবান্ধার কৃষকদের গলার কাঁটা

689

5000
তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা থেকে: বন্যা পরবর্তীতে গাইবান্ধায় গৃহপালিত গবাদীপশুর দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এর ফলে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। সেই সাথে খুরা রোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত গরু-ছাগল।

অপরদিকে গবাদীপশুর দামও কমেছে অনেকটাই। একারণে গৃহপালিত গরু-ছাগল এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

এক সময় গাইবান্ধা জেলার কৃষকরা গরু-ছাগল পালন করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে আনতো। সম্প্রতি কৃষকরা যেন পথে বসতে শুরু করেছে। একদিকে বন্যায় খেয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। অন্যদিকে গরু-ছাগল নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। এ নিয়ে কৃষকরা নির্ঘুম রাত পোহাচ্ছে। সবমিলে শুরু হয়েছে মড়ার ওপর খারার ঘা।

গোবিন্দগঞ্জের কৃষক জামাল মিয়া ও আনছার আলী জানান, বন্যার স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ফসল হারিয়ে কৃষকরা পড়েছেন গো-খাদ্য সংকটে। যার কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ‘পানির’ দরে বিক্রির করছেন তার গৃহপালিত পশু। ফসল হারিয়ে যেমন নিজেদের খাদ্য নেই। তেমনি খাদ্য সংকটও রয়েছে গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগি।

এ বছর দুই দফার বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার ৭টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পশু পাখির খাদ্যেও সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অভাবের তাড়নায় নিজেদের সংসার চালাতে অনেকটা লোকসান দিয়েই বিক্রি করছেন গবাদী পশু। শেষ সম্বল এই গৃহপালিত পশুগুলো বিক্রি করে রোপা আমন চাষ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। সবমিলে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আহাজারি করছেন চাষীরা।

ফুলছড়ির কৃষক রইচ উদ্দিন বলেন, “টাকাপয়সা নাই। নিজেই খাইতে পারছি না আর গোখাদ্য কিনব কিভাবে? ওদের আর না খাইয়ে রাখতে চাই না। গৃহপালিত পশুর এমন কষ্ঠ সহ্য হয় না, তাই বিক্রি করে দিলাম। তাও আবার পানির দামে।”

zakir-p1
এভাবেই গো-খাদ্যের সংকটে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছে কৃষকরা

সাদুল্যাপুরের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, কৃষক ও খামারীরা গো-খাদ্যের সংকট পড়েছেন। চারদিক থেকে ফসলহারা মানুষরা সমস্যায় পড়েছে। ফসল যাওয়ার পর এখন মানুষ বেকায়দায় পড়েছে গোয়ালের গরু নিয়ে। একে তো ঘরে মানুষের খাবার নেই তার ওপর দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট, এই দুই কারণে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে। গো-খাদ্যের প্রকট সংকট রয়েছে।

সাদুল্যাপুরের ইসবপুর গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, “আমি পাঁচটি গরু লালন-পালন করি। ইতোপূর্বে গরু পালনে বেশ লাভবান হয়েছি। এবারে গো-খাদ্যের চরম সংকট ও খাদ্যের অধিক দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছি। এমনকি খাদ্য কেনারও টাকা-পয়সা নেই। বাধ্য হয়ে খাল-বিল থেকে কচুরিপানা কেটে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে।’’

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম