বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা পাচ্ছেন বীজ ও সার সহায়তা

424

untitled-31_227739-2z76xbo2

সিলেট: বিভাগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তা দিচ্ছে সরকার। আসন্ন রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে বিভাগের চার জেলায় প্রায় ১৯ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এ প্রণোদনা পাবেন। এছাড়া আউশ আবাদে প্রায় ২৯ হাজার সাধারণ কৃষককে সার ও বীজ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

সিলেট আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে শুধুমাত্র প্রান্তিক কৃষকদের ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা মূল্যের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তাদের তালিকা তৈরি করে সার ও বীজ পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি পুনর্বাসন কমিটি এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

চলতি বছর সিলেট অঞ্চলে কয়েক দফা বন্যায় সিলেটের কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০১৭-১৮ কৃষি বর্ষে আঊশ ও রোপা আমনের আবাদ সম্প্রসারণে জোর দেয়া হয়েছে।

এ বছর সিলেট বিভাগে মোট ২৮ হাজার ৮শ’ বিঘা জমিতে আঊশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে মোট ২৮ হাজার ৮শ’ জন কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ ও ৪০ কেজি করে সার সহায়তা প্রদান করা হবে।

চলতি বছর রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমি চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৮ হেক্টর রোপা আমনের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। বাড়তি ফলনে বিশেষ প্রজাতির ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও ব্রি-৪৫ ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ রোপা আমনের ফসল উত্তোলন হবে ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে।

এছাড়া এবার শীতকালীন সবজি চাষ বাড়াতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গত ২০১৬-১৭ কৃষিবর্ষে বিভাগের মোট ৫০ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে আবাদ করে মোট ১০ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করা হয়। তবে চলতি বছর উৎপাদন আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি অফিস।

আসন্ন রবি মৌসুমে ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও বিটি বেগুনের বীজ এবং একই সাথে সার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ১৮ হাজার ৯শ’ ৪৮ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে এই বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় রয়েছে ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮০ টাকা, মৌলভীবাজার জেলায় ৪৩ লাখ ৪ হাজার ৭শ‘ ১৮ টাকা, সুনামগঞ্জে ৪৩ হাজার ৪শ’ ১৮ টাকা ও হবিগঞ্জে ২০ লাখ ২০ হাজার ৬৮০ টাকা মূল্যের কৃষির প্রণোদনা দেয়া হবে।

পুরো বিভাগে চলমান রবি মৌসুমে পুনর্বাসনের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রায় ১১শ’ কৃষককে দেয়া হবে ২ কেজি করে ভূট্টা বীজ এবং ৩০ কেজি সার। বিভাগের সিলেট জেলায় ৫শ’ জন এবং মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় ২শ’ জন করে এ সহায়তা পাবেন।

বিভাগীয় পর্যায়ে মোট ১৭ হাজার কৃষক পাবে ১ কেজি করে সরিষা বীজ ও ৩০ কেজি সার। তার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় ৫ হাজার জন করে এবং হবিগঞ্জ জেলায় মোট ২ হাজার কৃষক পাবে এ সহায়তা।

বিভাগের প্রতিটি জেলায় ২শ’ জন করে মোট ৮শ’ কৃষক পাবেন ৫ কেজি করে গ্রীষ্মকালীন মুগডাল বীজ এবং ২০ কেজি সার সহায়তা। প্রতিটি জেলায় ১২ জন করে মোট ৪৮ জন চাষি পাবে ২০ গ্রাম করে বিটি বেগুন বীজ ও সাথে ৩০ কেজি করে সার সহায়তা।

সিলেট আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফুর রহমান জানান, এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে শতভাগেরও বেশি আমনের আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। যদি আর কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় তবে আমরা এবার সিলেট অঞ্চলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করছি।

তিনি আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে বীজ ও সার সহায়তা এসেছে তা দ্রুত পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। আরো প্রণোদনা আসতে পারে, কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দিতে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- এ বছরে বন্যায় সিলেট বিভাগে বোরো ফসলের প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২০ হেক্টর জমি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৫ হাজার ১৬৮ হেক্টর, মৌলভীবাজার জেলায় ৯ হাজার ৯১৪ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলার ১৫ হাজার ৯৫৩ হেক্টর ও সুনামগঞ্জ জেলার ১ লাখ ৩১ হাজার ২২৫ হেক্টর ধানের জমি।

সিলেট বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২১ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৩৯ হাজার ৪৩৭ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ২৫ হাজার ৭৭৬ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৪১ হাজার ৪৭৮ জন ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৪ জন কৃষক। সূত্র: বাসস

ফার্মসঅ্যা্ন্ডফার্মার২৪ডটকম/এম