নড়াইল: জেলার তিন উপজেলায় আমন ধানের বাদামী গাছ ফড়িং পোকা দমনে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ধানের শীষ বের হবার আগে কিংবা শীষ বের হবার পরে কারেন্ট পোকা হিসেবে পরিচিত এ পোকার আক্রমণে ধানের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে আমন ধান রক্ষা করতে কি কি নিয়ম পালন করতে হবে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে ইতোমধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নড়াইল উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৩ উপজেলায় ৩০ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের চাষ করেছেন। ধান-চালের দাম বৃদ্ধিতে এ জেলার কৃষকরা নিজ আগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, জেলার কোন কোন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধানে পাকতে শুরু করেছে।এছাড়া বেশিরভাগ জমিতে শীষ বের হচ্ছে।গত তিন থেকে চারদিন আগে আমন ধানে বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিদের কাছ থেকে ধানে পোকার আক্রমণের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে পোকা দমনে আমরা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষাপেতে আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক সফসিন, মিপসিন, প্লেনাম, পাইরাজিন গ্ল্যামোর, ইমিটাফ, ক্লাসিক জাতীয় ওষুধ দ্রুত স্প্রে করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি।
এছাড়া পাকা জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সোমবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত নড়াইল সদর ও কালিয়া উপজেলায় মাত্র ৩.৫ হেক্টর জমি কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত হলেও এরমধ্যে ৩.১ হেক্টর জমিতে ওষুধ ও অন্যান্য কলাকৌশল প্রয়োগ করে জমির ফসল পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভবপর হয়েছে বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস বাসসকে বলেন, বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ সরেজমিনে দেখার জন্য নড়াইলের চন্ডীবরপুর ইউনিয়নের নাওরা, নূরমোহাম্মদনগর (মহিষখোলা), মাইজপাড়া ইউনিয়নের পচামাগুরা, কাঁঠালবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকার ধান ক্ষেত পরিদর্শন করে ওই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ প্রয়োগ করে আক্রান্ত জমি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেছে কৃষকরা তাকে জানিয়েছেন।
এছাড়া যেসব জমির ধান পোকায় আক্রান্ত হয়নি সেসব জমির মালিকদের এবং কৃষকদের আগাম সতর্কবার্তা ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষাকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বাদামী গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়। পোকা ধান গাছের রস চুষে খায় বলে দ্রুত শুকিয়ে যায়।ফলে দূর থেকে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। এ ধরনের ক্ষতিকে হপার বার্ন বলা হয়। পোকার এ ধরনের আক্রমণ থেকে ধানক্ষেত রক্ষাকল্পে আমরা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি বলে তিনি জানান।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম