রণজিৎ রাজ সরকার, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: পেঁপে ভালোবাসেন না এমন লোকের জুড়ি মেলা ভার। হোক কাঁচা বা পাকা। সবজি জাতীয় এ ফলের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ এ ফলের চাহিদাও ব্যাপক। পেঁপে চাষে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটায় অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী হওয়া যায়।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি হাতিমাড়া গ্রামের তমির উদ্দিনের ছেলে বাদল মিয়া পেঁপে চাষ করে খুব অল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে এলাকার মানুষের অনুকরণীয় পেঁপে চাষিতে পরিণত হয়েছেন।
বাদল মিয়া অতিকষ্টে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পান। পড়ালেখার ইচ্ছে থাকলেও আর এগুতে পারেননি তিনি। দরিদ্র বাবার সংসারে অল্প বয়সেই কৃষিকাজের মাধ্যমে সংসারের হাল ধরেন। লাল মাটির পাহাড়ি এলাকায় তিনি কলা চাষ করে কৃষি জীবন শুরু করলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন পেঁপে চাষ করে।
১২ একর জমিতে হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন বাদল মিয়া। স্থানীয় কৃষকদের কাছে তিনি এখন রোল মডেল। বাদল মিয়া পেঁপে চাষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন সবজি জাতীয় এ ফলকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করতে।
কৃষক বাদল মিয়া জানান, তিনি গত বছর পেঁপে চাষে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২৫ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেন। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এই অর্থ আয় করে তিনি পেঁপে চাষের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে তিনি ব্যাপক পরিসরে পেঁপে বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি ৩৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বাগান করেন।
তিনি বলেন, “আমি স্থানীয় উচ্চ জাত ও রেড লেডি জাতের নিজস্ব উৎপাদন করা পেঁপের চারা দিয়ে বাগান করেছি। তাছাড়া ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সব সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন। জমি লিজ, চারা, সার, কীটনাশক, শ্রমিকসহ নানা খরচ বাবদ এপর্যন্ত আমার ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু পেঁপে পরিপক্ক হওয়ার আগেই পাইকারের কাছে সম্পূর্ণ বাগান বিক্রি করেছি ৫০ লাখ টাকায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমার এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী। তাছাড়া এই ফল চাষে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। মাকড়শা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে আমি তেমন কোনো সমস্যা পাইনি।”
পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, “বাদল মিয়া একজন আদর্শ কৃষক। ঘাটাইল উপজেলায় তিনি একজন বড় পেঁপে চাষি। আমরা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। তাকে দেখে অনেক কৃষক এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী। তাছাড়া পেঁপে বাগান করে খুব অল্প সময়েই লাভবান হওয়া যায়।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন