ইমরুল কায়েস, বাগেরহাট থেকে: পান নিয়ে লেখক-সাহিত্যিকরা কত না বন্দনা করেছে ইয়াত্তা নেই। কিন্তু সুপারি ছাড়া পানের পূর্ণতার কথা কল্পনা করাই যায় না। কাঁচা, সুকনা, মদানো (ভেজা) কত না ভাবে পান প্রেমীরা সুপারি খায়। এছাড়া সুপারি নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয় হলে এই একটি অর্থকারী ফসলও।
একটি সুপারি গাছে বছরে কী পরিমাণ সুপারি হয় তা হয়তো অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু সুপারির এক থলিতে সর্বোচ্চ কত সুপারি হয়? ৫০/১০০ বা সবোচ্চ দেড়শর বেশি হয়তো কল্পনা করাটা ভুল হবে। কিন্তু একটি থলিতে ৫১১টি সুপারি বললে হয়তো একটু অবাকই হবেন।
হ্যাঁ, বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামের মো. তৈয়বুর রহমানের একটি সুপারি গাছের একটি ছড়াতে (থলি) ৫১১টি সুপারি হয়েছে। স্থানীয় সিঅ্যান্ডবি বাজারে সোমবার বিকেলে বিক্রি করার জন্য ওই থলিটি নিয়ে আসলে কৌতূহলবসত একনজর দেখতে মানুষ ভিড়জ জমায়।
তৈয়বুর রহমান জানান, শখের বসে প্রায় ১০ বছর আগে বাড়ির আঙ্গিনায় ৫টি সুপারি গাছ লাগানোর পাঁচ বছর পর প্রথম সুপারি পায় এই গাছগুলো থেকে। গাছে ফলনের প্রথম দুই বছর সুপারি কম হলেও এখন সুপারির ফলন অনেক বেশি। প্রতিটি গাছে বছরে মাত্র ৩/৪টি থলি হয়। আর প্রতি থলিতে ৫শর সুপারির বেশি।
অঞ্চলভিত্তিক সুপারির গণনার পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে। বাগেরহাটে প্রতি ১২টি সুপারিতে ১ গা (ডজন) আর ২২ গা এ এক কুড়ি সুপারি হয়। খুচরা হিসাবে প্রতি গা পাকা সুপারি ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কুড়ি হিসাবে বিক্রি করলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
তৈয়বুর রহমান আরও জানান, প্রতিটি গাছে থেকে বছরে দুই হাজার টাকার বেশি আয় হয় তার। সে হিসাবে তার ৫টি গাছ থেকে বিনাপরিশ্রমে ১০ হাজার টাকা অনায়াসে আয় হয়। প্রতি বছর এই গাছের সুপারি দিয়ে চারা বানাবার জন্য অনেকে আগাম সুপারির অর্ডার দিয়ে রাখেন। ভবিষ্যতে এই সুপারির বড় বাগান করার ইচ্ছা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে নতুন একশ চারা গাছ ইতোমধ্যে লাগিয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় রওশনওয়াজ বিউটি, উজ্জ্বল, আমজেদ হোসেন, হাসিব, মোহাম্মদ হেলাল, দীপকসহ কয়েকজন পানপ্রেমী জানান, তারা প্রতিনিয়ত পান খান। এবং এটা এমরকম নেশার মতো হয়ে গেছে। পানের সাথে সুপারি লাগবে অবশ্যই তাই, তার তৈয়বুর রহমানের কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে চারা বানিয়েছেন। ৩/৪ বছরের মধ্যে এই গাছ থেকে সুপারি পাওয়া যাবে। তারা জানান এই সুপারি অনেক সুস্বাদু।
বাগেরহাটের যাত্রাপুর ইউনিয়নের সুপারি বাগান মালিক আসাদ শেখ বলেন, তৈয়বুর রহমানের সুপারির ফলন অনেক বেশি। তাই আমি তার কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে বড় পরিসরে আবাদের জন্য চারা লাগিয়েছি। আশাকরি ভালো ফলন হবে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান, সুপারি একটি অর্থকরী ফসল। তৈয়বুর রহমানের সুপারিটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। এই জাতের সুপরির ফলন অত্যন্ত বেশি, তবে পরিমাণে বেশি হয় বলে সুপারির আকার কিছুটা ছোট হয়। বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের সুপারি চাষ করা গেলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন