ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন জেলার রৌমারী উপজেলায় এ বছর সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করে ১০ কোটি টাকা মুল্যের ৪০ মে. টন মধু উৎপাদন হবে। এতে মৌচাষে চাষিরা লাভবান হবার পাশাপাশি বাড়বে সরিষার উৎপাদন। উৎপাদিত মধু উন্নত মানের হওয়ায় দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো এখান থেকে সংগ্রহ করবে মধু।
স্থানীয় চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বন্যায় আমন ক্ষেত নষ্ট হবার পর এ বছর বিস্তীর্ণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। দিগন্ত বিস্তৃত হলদে ফুলে ঢাকা ক্ষেত সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনায় উল্লসিত সরিষা চাষিরা।
স্থানীয় মৌচাষিদের পাশাপাশি সাতক্ষীরা থেকে খামারীরা এসে সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করছে মধু। পরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করবেন মধু।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে এসেছেন সবুজ মিয়া নামে একজন খামারী। তিনি জানান, তিনি ১৫ জনের দল নিয়ে রৌমারীতে এসেছেন মধু সংগ্রহ করতে। তার মতো আরো কয়েকজন এসেছেন দলবল নিয়ে সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে। ক্ষেতের পাশেই ত্রিপোল টাঙিয়ে সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান করছেন। ৩-৪ দিন পর পর চাক ভেঙে সংগ্রহ করছেন মধু। সরিষার মৌসুম শেষে তারা কালোজিরা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের পর সুন্দরবনে চলে যাবেন। মৌসুম শেষে তারা চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখবেন অস্টেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা মৌমাছি।
তিনি জানান, রৌমারীতে উৎপাদিত মধু গুণগত মানে উন্নত। তাই দেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ক্ষেত থেকেই মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে।
খামারীরা জানান, রৌমারীতে সরিষার চাষ বেশি হয় বলে তারা ছুটে আসেন এখানে। মৌমাছিগুলো সারাদিন সরিষার ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি পরাগায়ণ ঘটায়। এতে সরিষার দানা পুষ্ট হয়, বাড়ে ফলন।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, মৌচাষ শুরু হবার পর সরিষার ফলন বিঘা প্রতি ৩-৪ মণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
খামারি ফরহাদ হোসেন জানান, ৪ বছর ধরে তিনি সাতক্ষীরার খামারীদের সহায়তায় মধু সংগ্রহ করছেন। এ বছর তার ২০০টি বক্স ক্ষেতের পাশে স্থাপন করা আছে।
তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলে সরিষা চাষ দেখে আমার মাথায় আসে মৌচাষ করার। ঢাকায় ট্রেনিং নিই। এরপর সাতক্ষীরায় দেখতে যাই। সেখানে চাষীদের সাথে পরিচয় হয়। তাদের এখানে আসতে বলি। তারা এসে চাষ করে প্রতিবছর লাভবান হচ্ছে।’
একইভাবে দুবলাবাড়িতে মোশারফ, বিক্রিবিলের শাহজাহান, আলগারচরে হাফিজুর ও মাঠেরভিটায় হাফিজুরসহ অন্তত ১৫ জন খামারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
রৌমারীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রৌমারীর সরিষা ক্ষেতে প্রায় ২ হাজার মধুর বক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বক্স থেকে গড়ে ২০ লিটার মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। আর বাজারে প্রতি লিটার মধু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৫০ টাকায়। এই হিসেবে প্রায় ১০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সরিষার উৎপাদন ১৫-২০ ভাগ বেশি হয়। ফলে অনুন্নত এ এলাকায় সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মাচন করেছে।
রৌমারী উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা দীপংকর রায় জানান, মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী মৌসুমের আগে বেকার যুবক এবং কৃষকদের মৌচাষে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বাসস
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস