পাবনার ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে লিচু

310

লিছুর-মুকুল

পাবনা: জেলার ঈশ্বরদী, চাটমোহর, সদর ও আটঘরিয়া এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে লিচু। তুলনামূলক লাভ হওয়ায় লিচু চাষে ঝুঁকছে কৃষক। লিচু প্রসিদ্ধ পাবনা অঞ্চলের লিচু বাগানগুলোতে লিচুর মুকুলে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। লিচু চাষিদের আশংকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে। তবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পাবনা জেলার লিচু বাগানগুলোর প্রায় ২০-২৫ ভাগ গাছে মুকুল আসেনি। এ বছর প্রায় ৭ থেকে ৮শ’ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা ।

পাবনা জেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ৮৪১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে ৪০ হাজার মে. টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ২১৯ হেক্টর জমিতে বেশি লিচু আবাদ করছেন কৃষকেরা। লিচু আবাদি বাগান ছাড়াও জেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক বাড়ির আনাচে-কানাচে ২/৪টি করে লিচু গাছ রয়েছে। এ বছর পাবনা অঞ্চলের লিচু বাগানগুলোতে লিচু কম থাকলেও প্রায় ৮শ’ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাবনার লিচু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে এবং লিচু চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমির একটি বাগানে ১৬ থেকে ২০টি লিচু গাছ লাগানো হয়। মোজাফফরপুরী বা দেশী জাতের লিচুর বড় কলম লাগালে ১-২ বছর পরই ফল ধরে। বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু গাছের কলম লাগালে ৩-৪ বছর পর থেকে ফল আসতে শুরু করে। তারা আরো জানান, বাগানের গাছের বয়স ১২/১৪ বছর হলে একটি পূর্ণাঙ্গ বাগান হিসেবে ধরা হয়। এসব বাগানের একটি গাছে ভালোভাবে লিচু আসলে গাছ ভেদে সর্বনি¤œ ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে করে এক বিঘা জমির একটি বাগানে ২ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা যায়। যা অন্য যে কোন ফসল আবাদ করে বছরে এক বিঘা জমি থেকে এত পরিমান টাকার ফসল বিক্রি করা সম্ভব নয়। ভালো লাভ এবং লিচু আবাদের জন্য উর্বর ভূমি হওয়ায় বিশেষ করে পাবনার সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার অনেক কৃষক লিচু বাগান তৈরি করতে ঝুঁকে পড়েছেন।

জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রুপপুর, ভারইমারি, জয়নগর, আওতাপাড়া, পাকশী, বক্তারপুর ও দাশুড়িয়া, আটঘরিয়া উপজেলার অভিরামপুর, দেবত্তোর, চাটমোহর উপজেলার রামনগর, গুনাইগাছা, রামচন্দ্রপুর, নতুন পাড়া, সদর উপজেলার চকউগ্রগড়, মধুপুর, মৌগ্রাম, জোয়ারদহসহ বিভিন্ন গ্রামে শত শত লিচুর বাগান রয়েছে।

চাটমোহর এলাকার লিচু চাষি আবুল কাশেম সহ অনেক লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা তারা জানান, পাবনা অঞ্চলে প্রথমে ঈশ্বরদী এলাকায় লিচু চাষ শুরু হয়। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় পাবনার সকল এলাকায় এর চাষ শুরু হয়েছে। বোম্বাই, চায়না-৩, মোজাফফরপুরী দেশী জাতের লিচু আবাদ হচ্ছে। দেশী জাতের লিচু আকারে ছোট। পাকা শুরু হয় উন্নত জাতের লিচুর চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে। এরফলে চাষিরা ভালো দাম পেয়ে থাকেন। এছাড়াও অল্প দিনেই লিচু পাকার কারণে বাগানে কম সময় শ্রম দিতে হয়। বেশী দিন রাত জেগে পাহারা দিতে হয় না। তাই অনেক চাষি দেশী জাতের লিচু আবাদে আগ্রহী।

সদর উপজেলা জোয়ারদহ গ্রামের লিচু চাষি আব্দুল লতিফ জানান, প্রতি বছরের তুলনায় তার বাগানে এ বছর লিচু কম এসেছে। তবে কম হলেও ভালো দাম পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।

জাতীয় ফল ও বৃক্ষ পুরষ্কার ও সনদপ্রাপ্ত ঈশ্বরদী উপজেলার লিচু চাষি আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল বলেন, পাবনার মাটি লিচু চাষের জন্য খবুই উপযোগী। লিচু এখন পাবনা অঞ্চলের জন্য একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম খরচে এবং কম পরিশ্রমে লিচু চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, এবার লিচুর ফলন কম হলেও আবাদ বেশি হওয়ায় লাভবান হবেন লিচু চাষিরা। প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে অতীতের চেয়ে এ বছর লিচু চাষিরা অনেক লাভবান হবেন। প্রায় ৮শ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে চাষিদের ব্যাপক সহযোগিতা করা হয়। বিএসএস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন