বিশ্বজুড়ে বাড়ছে কাঁকড়া চাহিদা। বিশ্ববাজারে চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে কাঁকড়া। নরম খোসাযুক্ত কক্সবাজার সামুদ্রিক কাঁকড়া বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ২০০ কোটি টাকা। ফলে এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানও বাড়ছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন কাঁকড়া চাষে। বর্তমানে কক্সবাজারে চাষ করা কাঁকড়া ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, মালেয়শিয়া ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি কয়েক জন ব্যসবসায়ী বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিসরে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু করেন। পরবর্তীকালে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। সীমিত আকারের চাষ করে উৎপাদিত কাঁকড়া বছরে ৫ থেকে ৭ হাজার টন রপ্তানি হয়।
সূত্রে জানায়, ২০০৩ সালের দিকে প্রথম কাঁকড়ার পোনা ও চাষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ মৎস্য ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্র। ২০১৪ সালের নভেম্বার থেকে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের যৌথ তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের একটি হ্যাচারিতে নতুন উদ্যোগে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে গবেষণা কার্যক্রম গ্রহন করে।
কক্সবাজার মৎস্য অফিস জানায়, বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকায় পাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে মাড ক্রাব শীলা কাঁকড়ার দাম ও চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি। তাই কাঁকড়ার চাষ ও ফ্যাটেনিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়র উঠছে। চিংড়ি চাষে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকলেও কাঁকড়া চাষে এ ঝুঁকি নেই। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মাঈন উদ্দিন আহামদ বলেন, নরম খোসাযুক্ত কাঁকড়া উৎপাদন করেন অংছিন। তারা দেখাদেখি উৎসাহিত হয়ে জেলায় শতাধিক ব্যাক্তি কাঁকড়া চাষ শুরু করছেন। কক্সবাজারের কাঁকড়া চাষিরা নিয়মিত প্রায় ২০টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি করছে। দেখাদেখি অনেকেই এখন কাঁকড়া চাষে উদ্যোগী হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় সফটসেল (আধুনিক) ও সনাতন পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। এ বিষয়ে চকোরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকা বাজারের কাঁকড়া সরবরাহকারী ছৈয়দ আলম জানান, একসময় কাঁকড়া ব্যবসাকে অনেক ঘৃণা করত। এখন এ ব্যবসা করাটাই শখের। আগামীতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানি খাতে এটি মাইলফলক হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁকড়া চাষে ঝুঁকি না থাকায় সফলতা বেশি। আগে মানসম্মত কাঁকড়া চাষের জন্য বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ঝুড়ি আনা হতো। এতে প্রতিটি ঝুড়ির পেছনে ব্যয় হতো ১৩০ টাকা করে। এখন দেশেই এইসব ঝুড়ি তৈরি হচ্ছে। মাত্র ৩০ টাকায় ঝুড়ি পাচ্ছেন কাঁকড়া চাষিরা। কক্সবাজারের সদরের খুরু শকুলের সফতসেল পদ্ধতির একটি প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, কাঁকড়া চাষের জন্য বাঁশ ও রশি দিয়ে এখানে তৈরি করা হয়েছে মাচা। কিছু দূর পরপর সবুজ টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো হয়েছে কিছু বাসা। এসব বাসার মধ্যে মজুদ করা হয়েছে কাঁকড়া চাষের সরঞ্জামাদি। ছোট ছোট করে তৈরি করা হয়েছে পুকুর গুলো। পুকুরের পানির উপর বসানো হয়েছে বাসা ও প্লাস্টিকের নেট। নেটের ভিতরে রাখা হয়েছে বাচ্চা কাঁকড়া। নির্দিষ্ট সময়ের পর এসব কাঁকড়া খোলস বদলালে তাদের ধরে পুকুরে দেওয়া হয় বলে জানান চাষিরা। কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরু শকুল ইউনিয়নের উপকূলীয় গ্রাম মনুপাড়ায় তিন একর জমিতে গড়ে তোলা হয় “ইরাওয়ান ট্রেডিং” নামে কাঁকড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সাল থেকে তিলে তিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন অংছিন। ২০১৫ সালে অংছিনের মালিকানাধীন কাঁকড়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইরাওয়ান ট্রেডিং ৩০ মেট্রিক টন কাঁকড়া রপ্তানি করেছে। ওই খাতে আয় হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মিলেছে কাজের স্বীকৃতিও। প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতেই এ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন।
সূত্র: আ.স