গাইবান্ধা থেকে: বোরো মওসুমে গাইবান্ধায় ধানক্ষেতে ‘ব্লাস্ট’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে।
ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করেও কৃষকরা রোগের বিস্তার থামাতে পারছেন না। জেলার সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ি ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আক্রান্ত ধানক্ষেত।
কৃষকরা বলছেন, বিআর-২৮ ধান এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বেশি।
মূলত জৈষ্ঠ্য মাসে বোরে ধানের শীষ বের হয়ে তা পরিপুষ্ট হয়। বৈশাখের শেষভাগ থেকে শুরু করে পুরো জৈষ্ঠ্য মাস জুরে চলে ধান কাটার পালা। কিন্তু ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব এবার কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আ কা ম রুহুল আমিন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
এর মধ্যে কত হেক্টর জমিতে ব্লাস্টের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তা জানাতে না পারলেও এ কর্মকর্তারা বলেছেন, “আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, যাতে কৃষকের ক্ষতি না হয়।”
ব্লাস্টের লক্ষণ:
ধানগাছে পাতা, কাণ্ড ও শীষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা যায়, যার দুই প্রান্ত লম্বা হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। দাগের মধ্যভাগ ছাই রংয়ের ও বাইরের দিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামী হয়। অনেকগুলি দাগ একত্রিত হলে পাতাটি মরে যেতে থাকে। ধান পুষ্ট হওয়ার আগে এ রোগের আক্রমণ হলে শীষের সব ধান চিটা হয়।
ব্যবস্থাপনা:
জমিতে সব সময় পানি ধরে রাখতে হবে।
কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।
প্রতি লিটার পানিতে ছত্রাকনাশক (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) যেমন: নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা অন্যান্য নামের অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করতে হবে।
পরবর্তী সতর্কতা:
আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
ধান কাটার পর শুঁকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
তথ্যসূত্র: কৃষি বিভাগ
গাইবান্ধা সদর উপজেলার তালুক মন্দুয়ার গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, তার এক বিঘা জমির বিআর-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের লোক যে ওষুধ লিখে দিয়েছে সেটা স্প্রে করেও লাভ হয়নি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামার গ্রামের আঙ্গুর মিয়া বলেন, ব্লাস্টে তার তিন বিঘা ধানক্ষেত ধূসর হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ সময়টায় ধান গাছ সবুজ থাকার কথা। সব ধান চিটা হয়ে গেছে। কত চেষ্টা করলাম। কিছুতেই লাভ হল না।
সাদুল্লাপুর উপজেলার পুরান লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুলা মিয়া বলেন, তার দুই বিঘা জমির বিআর-২৮ ধান গাছ ব্লাস্টের কবলে পড়েছে। কোনো কৃষি কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে স্থানীয় বাজারের দোকান থেকে ছত্রকনাশক ওষুধ কিনে জমিতে দিয়েছেন।
একই উপজেলার মহিষবান্দি গ্রামের আব্দুল বাকি মণ্ডল ও হাসানপাড়ার এন্তাজ আলীর বলেন, দানা পুষ্ট হওয়ার আগেই ধানগাছের ডগা ধূসর বা সাদাটে হয়ে যাচ্ছে। ছত্রাক দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে ওষুধ দিয়েও উপকার হচ্ছে না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেক ব্লাস্ট’ ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগে পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগের জীবাণু বাতাস ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
তিনি বলছেন, শীষ বের হওয়ার সময় এবং শীষ বের হওয়ার পরে জমিতে ছত্রাকনাশক, ট্রপার, কাসোবিন, নাটিভো, ফিলিয়া, এমকোর, এমিস্টার টপ জাতীয় কিটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। কিন্তু কৃষককে যেভাবে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তারা সেভাবে ব্যবস্থা না নেয়ায় রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজা নূর রহমান বলেন, রাতে শীত ও কুয়াশার আর দিনে গরমের কারণে এ ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এছাড়া জমির আইলে থেকে যাওয়া ছত্রাক এবং বাতাসের সঙ্গেও ব্লাস্ট ছড়াতে পারে।
তবে ব্লাস্টের কারণ উপজেলায় এবার ধান উৎপাদনে খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে তিনি মনে করছেন না। সূত্র: বিডিএন
2-day Seminar on Food & Environment Safety in Poultry Production held
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন