নীলফামারী: জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় জৈব কৃষি প্রযুক্তিতে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) মাত্র আড়াই থেকে তিনশ গ্রাম বীজ ব্যবহার করে স্থানীয় জাতের গম চাষে সফলতা এসেছে।
পরীক্ষামূলক ওই গম চাষে ব্যবহার হয়েছে ‘রেইজ্ বেড ফারো এ- টুইন প্লান্টেশন’ পদ্ধত্তি। স্বল্প পরিমাণ বীজ ব্যবহারে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে ওই বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে ওই প্রযুক্তিতে গম আবাদ করেছে ‘সজীব সীড্স’ নামে একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
পরীক্ষামূলক ওই গম চাষ সম্প্রতি দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ রেজাউল কবীর, ড. সিদ্দিকুন নবী ম-ল এবং ড. মো. আশরাফুল আলম পরিদর্শন করে বিশেষ ওই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
সজীব সীড্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান, কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে ‘রেইজ্ড বেড ফারো এ- টুইন প্লাটেশন’ পদ্ধতিটি খুঁজে পান তিনি। সেটি অধ্যয়ন করে পদ্ধতি অনুযায়ী স্থানীয় জাতের গম চাষে মনস্থির করেন। বিশেষ পদ্ধতিতে গমের চারা তৈরি করা হয় মাটিসহ একশ পাত্র সম্পন্ন একটি ট্রেরের মধ্যে। প্রতিটি পাত্রে একটি করে গম বীজ রোপণ করেন তিনি। ওই পাত্রে অঙ্কুরিত ১২ থেকে ১৪ দিন বয়সের চারা সারিবদ্ধভাবে প্রায় দুই বিঘা জমিতে আড়াই ফিট প্রস্থের বেড তৈরি করে রোপণ করেন। পাশাপাশি বারি-৩৩ জাতের গমের চারা রোপণ করেন একটি বেডে। চারা লাগানোর ১৩০ দিনের মধ্যে গমের ফলন উঠেছে ঘরে। ফলনেও সফলতা এসেছে তার।
তিনি জানান, ওই পদ্ধতি অনুযায়ী আড়াই ফিট প্রস্থের একটি রেইজ্ড বেড থেকে আরেকটি বেডের দূরত্ব ১৬ ইঞ্চি। রেইজ্ড বেডের ফাঁকা জায়গাটি ব্যবহার করা হয় সেচের কাজে। বেডে আট ইঞ্চি দুরত্বে একটি করে চারা লাগানো হয়। এতে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) চারার সংখ্যা ৬হাজার ৪শ। ওই পরিমান গম বীজের ওজন মাত্র আড়াই থেকে তিশ গ্রাম। আবাদে ব্যবহার করা হয় বায়োগ্যাস স্লারী, নিমের খৈল, কেঁচো কম্পোস্ট, হাঁড়ের গুঁড়া। কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে নিম তেল ও মেহগনি তেল। দেশী জাতের ওই গমের চারা থেকে আরো নূতন ২০ থেকে ২৪টি নূতন কুশির (চারা) জম্ম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সাধারণত এক বিঘা জমিতে গম আবাদের জন্য প্রয়োজ ২০ কেজি বীজ। সেখানে ছয় হাজার ৪শ চারা উৎপাদনে প্রয়োজন হচ্ছে আড়াই থেকে ৩শ গ্রাম গম বীজ, এতে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। অপরদিকে গম ক্ষেতে সেচের প্রয়োজনে কৃষকরা সাধারণত গোটা জমিতে একসাথে সেচ প্রদান করে থাকেন। সনাতনী পদ্ধত্তিতে দেওয়া সেচের পানি গমের চারা একসাথে গ্রহণ করতে পারে না, ফলে সেচের পানির অপচয় হচ্ছে। সেচ প্রয়োজনে বিশেষ ওই পদ্ধত্তিতে বেডের মাঝে ১৬ ইঞ্চির ফাঁকা স্থানটিতে কিছুটা পানি জমিয়ে রাখা হয়। ফলে সেখান থেকে গমের চারা শিকরের মাধ্যমে পরিমান মতো পানি গ্রহণ করতে পারে। এতে চারা পরিপুষ্ট হয়ে ফলনের পরিমান বাড়ে।
তিনি বলেন, বিলুপ্ত প্রায় গমের আবাদ ফিরিয়ে আনাই আমার মূল উদ্দেশ্য। নূতন এ পদ্ধতিটি সাধারণ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই আমি। যাতে করে এ অঞ্চলের চাষিরা এ নতুন পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং গম চাষ করে অধিক ফলনের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন। পাশাপাশি আবাদের জমির মাটিতে জৈব অংশ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ ওই পদ্ধটি কার্যকর করতে কৃষি বিভাগের বিশষ সহযোগিতা চান তিনি।
তিনি জানান, বিশেষ ওই পদ্ধতির উদ্ভাবকের নাম টি কাটাইমা। জাপানী ওই শস্য বিজ্ঞানী ১৯৫১ সালের পদ্ধতিটির উদ্ভাবন করেন। চাষাবাদের ওই পদ্ধতি উদ্ভাবনকালে তিনি ধানের একটি চারা জমিতে লাগানোর পর ৮৪টি কুশি পান। ফলনও মিলে অধিক। ধান ও গম গ্রাস ফ্যামিলিভূক্ত। একই ম্যামিলিভুক্ত হওয়ায় গম চাষেও এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।বাসস
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএস