গাজীপুর : চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার কয়রা উপজেলায় মহারাজপুর গ্রামে ৭শ বিঘা জমিতে লবণসহিষ্ণু ব্রি-৬৭ জাতের ধান উৎপাদিত হয়েছে। এমন সফলতা এবারই প্রথম।
এভাবেই বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় সলফতা আসছে অবিরাম। একের পর এক জলবায়ুসহিষ্ণু ধান উদ্ভাবনের ফলে এবার বোরো উৎপাদনে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
শুধু জলবায়ুসহিষ্ণু নয় এবার বিআরআরআই’র বিজ্ঞানীরা ব্লাস্টসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে গবেষণা করছেন। দ্রুত সময়ে এই জাতের ধান কৃষকের মাঠে আসবে। ফলে সামনে আরও বোরো ধানের উৎপাদন বাড়বে।
চলতি মৌসুমে দুই কোটি টন বোরো উৎপাদন ছাড়াবে বলে জানিয়েছে বিআরআরআই। ২০১৭ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ টন ও ২০১৬ সালে ১ কোটি ৯১ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদিত হয়েছিলো।
বিআরআরআই সূত্রে জানা গেছে, ব্লাস্ট কিংবা শিলাবৃষ্টি সত্ত্বেও এবার প্রথমবারের মতো দেশে বোরোর উৎপাদন ২ কোটি টন ছাড়াবে। কারণ ব্লাস্ট কিংবা শিলাবৃষ্টিতে দুই হাজার টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিপরীতে সারাদেশেই বোরো আবাদের আওতা এবং উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বড় কোনো দুর্যোগ না হলে এবার মোট বোরোর ফলন দুই কোটি টন ছাড়াবে।
সারাদেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া এবং ধানের চড়া দামের কারণে কৃষক এবার বোরো আবাদের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। ফলে সারাদেশে বোরো আবাদ ৪৮ লাখ হেক্টর ছাড়িয়ে যায়।
বর্তমানে দেশে ২০ কোটি জনসংখ্যা হিসাব করে ধান উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই হিসেবে অতিরিক্ত তিন থেকে চার লাখ টন বাড়তি চাল প্রয়োজন। এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আরও দেড় লাখ টন বাড়তি চাল প্রয়োজন। ফলে বছরে দেশে সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টন চালের প্রয়োজন। এটা মাথায় রেখে কাজ করছে বিআরআরআই।
গাজীপুরে নিজ দফতরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর বলেন, এক সময় আমরা ভাতের মাড়ের জন্য অপেক্ষা করতাম। এখন এই অবস্থা আর নেই। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এখন মোটা ভাত খেতে চাই না। বিআরআরআই’র বিজ্ঞানীরা ৯১ জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে পাঁচটি হাইব্রিড বাকিগুলো ইনব্রিড। সবগুলো ধানের জাত আবহাওয়া ও মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে উদ্ভাবিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমরা ধান উৎপাদনে রেকর্ড গড়বো। আশা করছি দুই কোটি টন ছাড়াবে। ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন হয়েছে। যেখানে মাত্র ব্লাস্টে ক্ষতি হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে সারা দেশে মোট দুই হাজার মেট্রিক টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এর থেকে সিস্টেম লস আরও বেশি হয়। তারপরও আমরা সচেতন হয়েছি। আশা করছি সামনে ব্লাস্টসহিষ্ণু জাতের উদ্ভাবন হবে। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে গবেষণা করছেন। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
হাইব্রিড-০৫ জাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা উচ্চ ফলনশীল। এই ধানের ভাত ঝরঝরা, চিকন ও প্রোটিনযুক্ত। আশা করছি দেশব্যাপী এই ধান সাড়া ফেলবে। এর উৎপাদন খরচ বোরো ধানের মতোই। আমাদের বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করছেন। জনবল আরও বাড়ানো দরকার। দেশে ধানের ফলন আরও বাড়াতে হবে। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু সে তুলনায় জমি বাড়ছে না।
হাওরাঞ্চলের জেলাগুলোয় এবার ৯ লাখ ১৫ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৪ হাজার, নেত্রকোনায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৪০০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লাখ ৭ হাজার ৫৫২, সিলেটে ৭৪ হাজার ১২০, মৌলভীবাজারে ৫২ হাজার ৩৫২ এবং হবিগঞ্জে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর রয়েছে। আর এ থেকে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ৩০৭ টন।
তবে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হাওরাঞ্চলের কৃষক এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছে। হাওরবেষ্টিত সাতটি জেলায় সব মিলিয়ে ৯ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আর শুধু হাওর এলাকায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে। বিএন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন