বান্দরবানে খাদ্য উৎপাদনে চোখে পড়ার মতো সাফল্য

303

খাদ্য-পাহাড়ে

বান্দরবান: জেলায় খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গত ৮ বছরের তথ্যানুযায়ী জেলার ৭টি উপজেলায় খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে ১১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। বার্ষিক খাদ্য উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বান্দরবান জেলা বরাবরই খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল হিসেবে থাকছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ বছর পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলায় উৎপাদিত খাদ্যের পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাহাড়ের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় মৌসুমী অন্যান্য কৃষিপণ্য বা ফসলের পাশাপাশি খাদ্য (চাল ও গম ভিত্তিক তথ্য মতে) উৎপাদন বৃদ্ধির হার সাফল্যজনক।

তথ্য মতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে উৎপাদিত হয় ৬৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন খাদ্য, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সফল্যজনক হারে বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদিত হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০১ মেট্রিক টন খাদ্য। জেলায় এ অর্থবছর চাহিদার বিপরীতে খাদ্য বেশি উৎপাদিত হয়েছে ২৪৮ মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আলতাফ হোসনে জানান, সাধারণত অনাবাদী জমি সেচসুবিধার আওতায় এনে চাষিরা চাল ও গমের উৎপাদন ক্রমেই বাড়াচ্ছেন। অন্য ফসলের চেয়ে ধান গমের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বার্ষিক চাহিদার উদ্বৃত্ত পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতিও ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছেন। হাট-বাজারে ধান-চালের কাঙ্ক্ষিত মূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা।

সাধারণ প্রশিক্ষণ এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে জেলার কৃষকদের মাঝে। আবহাওয়া এবং পরিবেশেরও অনুকূলে রয়েছে।

জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়নের চেমীডলুপাড়ার কৃষক ক্যচিং মারমা এবং ধনুচিং মারমা বলেন, তারা প্রথম শ্রেণির প্রতিকানি জমিতে ১০০ থেকে ১২০ আড়ি ধান উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তারা উদ্বৃত্ত ধান বা চাল বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন।

লামা উপজেলার নুনারবিল গ্রামের কৃষক আহমদ কবির, ফরিদ আহমদ এবং কালু মিয়া বলেন, তারা জমিতে আউশ-আমন, বোরা চাষ করে ভাল ফলন পাচ্ছেন কয়েকবছর ধরেই।

কৃষকরা বলেন, নিজেদের খাবার পরিমাণ খাদ্য মজুদ রেখে অবশিষ্ট ধান-চাল বাজারে বিক্রি করে পারিবারিক অর্থযোগানও দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

রুমা উপজেলার রুমাচর গ্রামের কৃষক মংম্রাচিং মারমা এবং সাথোয়াই মং মারমা বলেন, সাংগু নদীর তীরেই তাদের জমি রয়েছে। তারা প্রতিমৌসুমে জমিতে কৃষি চাষ করে সান্তোষজনক ধান উৎপাদন করতে পারছেন। মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ এবং মাঠ কর্মকর্তাদরে কাছ থেকে কারিগরি সহায়তাও। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান-চালের একাংশ হাটাবাজারেও বিক্রি করার সুযোগ পান কৃষকরা।

জেলায় বর্তমান জনসংখ্যার পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৪ জন। বার্ষিক খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও বেড়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, বিগত ২০০৬-০৭ সালে জেলায় ২৩ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় বোরো, আউশ-আমন ধানের। ওই সময় উৎপাদিত হয় ৫৮ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন চাল। চলতি সালে (২০১৬-১৭) আবাদ হয়েছে ২৯ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত খাদ্যের পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন চাল।

সূত্র জানায়, খাদ্য উৎপাদনে জেলায় কৃষিপণ্য উৎপাদনে জমিতে প্রাকৃতিক পানির উৎস ছাড়াও সেচসুবিধার কাজে ব্যবহার হচ্ছে ১ হাজার ১৬৭৪টি সেচযন্ত্র। ব্যবহারকৃত সেচযন্ত্রের কারণে সেচের আওতাভুক্ত জমির পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ১৯৫ হেক্টর। জেলায় ১ হাজার ২৪৬টি বাঁধের কারণে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর অনাবাদী জমি চাষের আওতায় এসেছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন