চট্টগ্রামের এস আলম সুগার মিলে আগুনে পুড়ে গলে যাওয়া অপরিশোধিত চিনি গিয়ে পাশের কর্ণফুলী নদীতে মিশছে। ফলে পোড়া চিনি আর নদীর পানি একাকার হয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে।
এতে নদীর বিভিন্ন রকম মাছ ও জলজ প্রাণী ইতিমধ্যে ভেসে উঠতে শুরু করেছে। তবে শুধু নদী নয় কারখানার আশপাশের রাস্তাঘাটে জমে আছে পোড়া চিনির পানি।
বুধবার (৬ মার্চ) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পোড়া চিনির গলিত পানি দুটি নালা হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। পোড়া চিনির বর্জ্যে নদীর দক্ষিণ পাড়ে বাংলাবাজার খাল ও ঘাটের পাশের অংশের পানি ঘোলাটে বাদামি রঙ ধারণ করেছে। এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধও ছড়িয়ে পড়েছে।
নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাঁচকি, টেংরা, কাঁকড়া, চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভাসছে। স্থানীয়রা মাছগুলো সংগ্রহ করতে নেমে পড়েন নদীতে।
মাছ ধরতে আসা কয়েকজন জানান, নদীর পানিতে সুগার মিলের পোড়া কেমিকেল পড়ায় মাছ নিঃশ্বাস নিতে না পেরে ভেসে উঠেছে। মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী উঠে আসছে তীরে।
কিছু মাছ পানির উপরের দিকে কিছুক্ষণ ভেসে আবার ডুব দিচ্ছে। ভাসার সময় হাত দিয়েও মাছ ধরা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে নানা রকম দূষণের কারণে গত এক দশক ধরে কর্ণফুলীতে বড় আকারের মাছ আর তেমন নেই। ছোট যে কয়েক প্রজাতির মাছ প্রতিকূল এই পরিবেশে টিকে আছে, সেগুলোও চিনি পোড়া রাসায়নিক দূষণে নিঃশেষ হতে বসেছে। পোড়া চিনির বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেছে। সে কারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পানিতে চিনির বর্জ্য মিশে যাওয়ায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে জলজ প্রাণী হুমকিতে পড়বে।
চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের একটি দল নদীর পানির ফিজিক্যাল ও কেমিকেল কমপোনেন্টের টেস্ট করছে। পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্রুত কমে যাচ্ছে।
জোয়ার এলে নদীর পানিতে মেশা রাসায়নিকের পরিমাণ হয়ত কিছুটা কমবে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। এই অবস্থায় পানির মান স্বাভাবিক হওয়ার জন্য জোয়ার-ভাটার অপেক্ষায় আছেন বলে জানান তিনি।