অর্থকারী ফসল সুপারিতে রয়েছে নানান ভেষজগুণ

1045

সুপারি

সুপারি এক প্রকারের ফল-ফসল। এর ইংরেজি নাম বিটেল নাট। সংস্কৃত ভাষায় গুবাক। সুপারি পাম গোত্রের অন্তভুর্ক্ত। পান এবং সুপারি একে অপরের পরিপূরক। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত পান-সুপারি খান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজের শেষে বিশেষ আপ্যায়নের তালিকায় এর স্থান থাকে সবার ওপরে। বাঙালিদের এ রেওয়াজ বহু পুরনো। এমনও বুড়াবুড়ি আছেন খাবার কম খেতে রাজি, কিন্তু প্রতিবেলা পান-সুপারি থাকতেই হবে। কেউ আছেন খাওয়া শেষে এক টুকরো সুপারি খেতে অভ্যস্ত।

ফলজাতীয় ফসলের মধ্যে সুপারি চাষে সবচেয়ে কম জায়গা লাগে। প্রতিকূল পরিবেশেও এরা বেড়ে ওঠতে পারে। সারিবদ্ধ গাছ বাড়ির শোভা বাড়ায়। সুপারির আদি নিবাস এ দেশে না হলেও উপকূলীয় এলাকায় এর ফলন ভালো হয়। এসব জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অন্যতম।

এরা সবল কাণন্ডের অধিকারী এবং শাখাহীন হয়। এক বীজপত্রী এ বৃক্ষ সাধারণত ৮০ থেকে ১০০ ফুট উচ্চতা হয়। এর পাতার আকার লম্বা। মধ্যশিরা বেশ শক্ত এবং দুপাশে চিরুনির দাঁতের ন্যায় সবুজ পত্রফলক সাজানো থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে ফুল আসে আর পাকে কাতির্ক-অগ্রহায়ণে। কাঁদিতে থোকায় থোকায় অনেক ফল ধরে। কাঁচা ফল দেখতে সবুজ। পরিপক্ক হলে হলুদ বা কমলা রঙ ধারণ করে। কাঁচা ও পাকা উভয় ফল খাওয়া যায়। ফল দেখতে অকেটা গোলাকার। সুপারি গাছের শিকড় উপরেও বিস্তৃত থাকে। বাংলাদেশে এর অথৈর্নতিক গুরুত্ব অনেক। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। ইচ্ছে করলে আমরাও লুফে নিতে পারব বৈদেশিক মুদ্রা অর্জেনের বিরাট সুযোগ।

সুপারিতে কিছু ভেষজগুণ রয়েছে। সুপারি আগুনে ভেজে মিহি গুঁড়া করে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা ভালো হয়। এ ছাড়া রক্ত আমাশয়, কৃমি ও অজীর্ণ রোগের উপকার পাওয়া যায়। সুপারি শরীরকে চাঙ্গা রাখে। বমিভাব দূর করে। দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। হজমে সহায়তা করে। দাঁতের অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। এতে মুখের দুগর্ন্ধ দূর হয়। পাশাপাশি ক্ষয় রোধ করে। রঙ ও ঔষধশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সুপারি ব্যবহার হয়। পানি শোধনেও কাজ করে। গাছ দিয়ে কবরের পাটাতন দেয়া যায়।

এ ছাড়া কুঁড়েঘরের বেড়া নির্মাণে কাজে লাগে। সুপারি পাতা সোয়ারি হিসেবে ব্যবহার হয়। মাটিতে পাতার খোলের উপর একজন বসে থাকে, আরেকজন পাতার অগ্রভাগ ধরে টেনে নিয়ে যায় এবাড়ি ওবাড়ি। এ এক ভিন্ন রকম আনন্দ। এমন দৃশ্য গ্রামাঞ্চলে আজও চোখে পড়ে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ