আমদানি নির্ভর বিদেশি ফল এবার দেশেই চাষ হচ্ছে

1006

ড্রাগন-ফল

আদিত্য বিপ্লব, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে খুব সফলভাবে বিভিন্ন ফলের চাষ হচ্ছে। যে ফলগুলো আগে আমদানি করে দেশের চাহিদা মিটানো হতো এখন সেই ফলগুলো দেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে। তাও বিদেশি জাতের চেয়ে বেশি স্বাদ এবং উন্নত পুষ্টিমানের।

বিশেষ করে উত্তর চট্টগ্রামে অনেক ফলদ বাগান গড়ে উঠছে। তার মধ্যে মাল্টার চাষ বেশ ভালোভাবেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও খাটো জাতের নারিকেলও চাষ হচ্ছে বেশ। প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

খাটো জাতের নারকেল এবং ড্রাগন ফল চাষে চট্টগ্রামে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়। এই দুটি ফল চাষ করতে তেমন উর্বর জমিও লাগে না। তাছাড়াও কম বিনিয়োগে অধিক ফলনশীল হওয়ায় ইতোমধ্যে কৃষকের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

ইতোমধ্যে এসব ফলের চাষ করে অনেক কৃষক সফল হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার মধ্যে একজন হলেন ফটিকছড়ির মো. ইউনুচ। তিনি মিষ্টি মাল্টার চাষ করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বন বিভাগে চাকরি করলেও ফলজ বৃক্ষের প্রতি তার রয়েছে আগ্রহ। আর এ আগ্রহ থেকেই মনোযোগ দেন মাল্টা চাষে।

এর আগে চট্টগ্রাম শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় আড়াই হাজার বিভিন্ন ধরনের ফলজ চারা রোপণ করেন তিনি। সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতে করে বাইরে থেকে ফল কিনে খেতে না হয়। সেজন্য তার এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। তিনি ২০১৩ সালে মাল্টা চাষ শুরু করেন। নিজের বাড়ির পাশেই জমি বাছাই করেন। হেয়াকোঁ চট্টগ্রাম সড়কের পাশে তার মাল্টা বাগানের তিন দিকেই রয়েছে ছড়া। সমতল ভূমি হলেও পানি জমে না থাকার কারণে মূলত জমিটি বাছাই করেন তিনি।

এরপর হাটহাজারীর কৃষি গবেষণা কর্মকর্তা ড. আমিনের নিকট থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নেন। বর্তমানে তার দৃষ্টিনন্দন মাল্টা বাগানে এক হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৫০০টি আম গাছ, আপেল গাছ ৫০টি, পেয়ারা গাছ ৩০০টি, লেবু গাছ ১০০টি, ট্যাক চারা ১০০টি, নাশপাতি, আঙ্গুর, মিষ্টি কামরাঙ্গা, কলা, কাঁঠাল ও জলপাই গাছ।

তিনি জানান, মাল্টা ধরা পর্যন্ত প্রতিটি চারার পিছনে খরচ হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রথম বছর হিসাবে প্রায় ৫ টন মাল্টা ফলন হয়েছে বলে জানান ইউনুচ। এ ছাড়া প্রায় ৫ মণের মত মাল্টা তিনি স্থানীয় গ্রামবাসীর মাঝে বিতরণ করেছেন। মাল্টা ছাড়াও এবছর ৫০ হাজার টাকার আমও বিক্রি করেছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা শহীদ জানান, মাল্টাগুলো অত্যন্ত স্বাদের।

এ ব্যাপারে বাগানের মালিক মোহাম্মদ ইউনুচ জানান, শখের বসেই মাল্টা চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে সেটা তার একটি আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। প্রতিকেজি মাল্টা বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৩৫০ মেট্রিক টন। উপজেলার মাল্টা উৎপাদন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক গত ৪ বছরে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়িতে ১০০টির বেশি মাল্টা বাগানে বিনামূল্যে চারা, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়েছে। ২০০টি বসতবাড়িতে বিনামূল্যে ১২টি করে সাইট্রাস জাতীয় চারা বিতরণ করা হয়েছে। বারি মাল্টা-১ জাতের প্রতি গাছে ২০০-৪০০টি, হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ মেট্রিক টন মালটা উৎপাদন হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল হক বলেন, চট্টগ্রামে ফল চাষে বিপ্লব ঘটবে। এই উৎপাদন সারা দেশের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। এছাড়াও আগামী তিন বছরে চট্টগ্রামের ফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে।

চট্টগ্রাম বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক আনন্দ চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে প্রচলিত এবং উন্নত ও উচ্চফলনশীল জাতগুলির পাশাপাশি অনেক উচ্চমান সম্পন্ন ফসল চাষ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাষিরা অনেক বেশি লাভবান হয়। যেমন ফল হিসেবে লটকন, রামরুটান, ড্রাহনফ্রুট, থাই পেয়ারা, মাল্টা ইতাদি। এছাড়াও সবজির ক্ষেত্রে চাইনিজ ক্যাবেজ, লেটুচ, ক্যাপসিকাম, পুদিনা পাতা ইত্যাদি। এসব চাষাবাদে অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভবান হওয়া যায়।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আদিত্য/মোমিন