আমনের চারায় স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা

212

শেষ মুহূর্তে মাঠে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা। কয়েক দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় নরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর, রায়পুরা, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও পলাশ উপজেলার মাঠে মাঠে চলছে আমন রোপণে কৃষকের ব্যস্ততা।

আমন ধান মূলত দুই প্রকার; রোপা আমন ও বোনা আমন। রোপা আমন অন্য জমিতে চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা ক্ষেতে রোপণ করে ধান উৎপন্ন হয় বলে এর নাম রোপা আমন। রোপা আমন আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটা হয়।

রোপা আমনের আধুনিক এবং উন্নত জাতগুলো হলোÑবিআর-৩, বিআর-৮, বিআর-৫, বিআর-১০, বিআর-২২, বিআর-২৩, বিআর-২৫, ব্রি ধান-৩০, ব্রি ধান-৩১, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৩৯, বিনাশাইল, নাজিরশাইল, বিনাধান-৪ উল্লেখযোগ্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় ৪১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত ৩৫০টি সেচযন্ত্রের চালু রয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেচে উৎপাদন খরচ কমলেও সার কীটনাশক ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে কাক্সিক্ষত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এ অবস্থায় সারের কৃত্রিম সংকট ঠেকানোর দাবি তাদের।

জেলার শিবপুর উপজেলা দুলালপুর ইউনিয়নের দরগারবন্দ গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমন রোপণের মৌসুমের প্রথম দিকে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি, যার প্রভাব পড়েছিল ধান রোপণে। তীব্র গরমের কারণে শ্রমিকদের কাজে ধীরগতি এসেছিল। হাল খরচ, সেচ খরচ ও শ্রমিক খরচ বেশি পড়ছে। ইদানীং কিছুদিন যাবৎ প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যার ফলে জমি এখন সম্পূর্ণ সেচের আওতায় এসেছে।

রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের কৃষক নূরে আলম বলেন, এ বছর আমন ধান রোপণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ১২ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার জমিতে অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম প্রয়োগের ১৫ থেকে ২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। এতে করে জমিতে ভালো ফলন হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির জন্য ১৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করা হয়।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ বলেন, জেলার প্রায় সব উপজেলায়ই আমনের চারা রোপণ শেষ পর্যায়ে। কয়েক দিনের দিনের মধ্যেই রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।