তিন জেলায় আমন মৌসুমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বন্যা ও খরাসহিষ্ণু ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষক। আকস্মিক বন্যাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত বিনা ১১ ধান প্রতি হেক্টরে ৫.৪১ টন ফলেছে।
এছাড়া স্বল্প জীবন কাল সম্পন্ন খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত বিনা-১৭ (গ্রিন সুপার রাইস) ধান ৫.৮৯ টন উত্পাদিত হয়েছে।
প্রচলিত আমন জাতে গাছ ফড়িং পোকা বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়। কিন্তু এ দু’ জাতের ধানে গাছ ফড়িং পোকা বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়নি। প্রচলিত জাতে প্রতি হেক্টরে মাত্র দেড় টন ধান উত্পাদিত হয়।
পক্ষান্তরে এ দু’জাতে প্রচলিত জাতের তুলনায় অন্তত সাড়ে তিন গুণ বেশি ধান ফলেছে। স্বল্প মেয়াদকাল সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল এ দু’ জাতের ধানে সার ও সেচ কম লাগে। তাই কৃষক এ জাতের ধান আবদ করে লাভবান হন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিতোষ মণ্ডলের জমিতে উত্পাদিত এ দু’ জাতের ধান কেটে পরিমাপ করে ভাল ফলন পাওয়া গেছে বলে গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র আরো জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বাগেরহাট জেলার ১৬ একর জমিতে বিনা ১১ ধানের ৩০ টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এছাড়া ওই ৩ জেলার ২৫ একরে ৩৮ টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষক বিনা ১৭ ধানের আবাদ করেন। প্রত্যেক জেলায় এ ধানের ট্রায়েলে সাফল্য এসেছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিতোষ মণ্ডল বলেন, বিনা ধান-১১ জমিতে রোপণের পর আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। প্রায় ২০ থেকে ২২ দিন এ ধান পানির নীচে ছিলো। ধান গাছের গোঁড়ায় পচন ধরে। এতে আমি হতাশ হয়ে পরি। পরে জমি থেকে পানি নামতে শুরু করায় ধান গাছ নতুন করে কুশি ছাড়ে। এ জমিতে মাত্র ১২০ দিনে এ জাতের ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। এছাড়া এ ধানে গাছ ফড়িং পোকা বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়নি। পতি বছর এ ধান চাষ করে একই জমিতে ৩টি ফসল ফলিয়ে লাভবান হবো।
বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি গ্রামের কৃষক প্রহল্লাদ হীরা কৃষক বলেন, আমি খরা সহিষ্ণু স্বল্প মেয়াদকাল সম্পন্ন বিনা ধান-১৭ আবাদ করেছি। এ ধান মাঠে রোপণ থেকে পাকতে সময় লেগেছে মাত্র ১১০ দিন। এ ধান খরায় পুড়েছে। তারপরও বৃষ্টি পাওয়ার সাথে সাথে ঘুরে দাড়িয়ে ভালো ফলন দিয়েছে। এ ধানে সার ও সেচ খুবই কম লাগে। এ কারণে এ ধান আবাদ করে লাভবান হয়েছি। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই এ ধানের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিএডিসির মাধ্যমে এ জাতের ধানের বীজ কৃষকের হাতে পৌঁছে দিলে কৃষক বিনা ধান চাষাবাদ করে উপকৃত হবেন বলে তিনি জানান।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান বলেন, আমরা বিনামূল্যে কৃষককে এ দু’ জাতের ধান দিয়েছি। তারা মাঠে প্রদর্শনী প্লট করে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে। এ ধানে গাছ ফড়িং পোকা পোকার আক্রমণ হয়। বন্যা ও খরার মতো প্রতিকূলতায় পড়েও এ ধান ভালো ফলন দিয়েছে। এ ধানের আরো বেশি ফলন দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ ধানের ফলন তিনগুণেরও বেশি হয়েছে। তাই প্রদর্শনী প্লট দেখে ৩ জেলার কৃষক এ জাতের ধান আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, আমন মৌসুমে বিনা উদ্ভাবিত বন্যা ও খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত ট্রায়েলে ৩ জেলায় ভালো করেছে। এ ধান আবাদ করে কৃষক লাভবান হয়েছে। আমন মৌসুমে দেশে ধানের উত্পাদন বৃদ্ধিতে এ ধান ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম