আম কারবারে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

372

আমবাজার
ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পরও পুরো জুন মাস জুড়েই চলবে ‘আম বাণিজ্য’। তাই আম বাগানের শ্রমিক ও আমের ঝুড়ি বানানোসহ নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে উত্তরের এ জনপদ কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

এবছরও রোজার মধ্যে শুরু হয় আমের মৌসুম। তবে তখন ব্যাপকভাবে আম না ভাঙায় ঈদের পর জমে ওঠে রাজশাহীর আম বাজার। এখন বাজারে রয়েছে ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) ও ল্যাংড়া জাতের আম। সঙ্গে রয়েছে লক্ষণভোগসহ নতুন নতুন জাতের গুটি আম। দাম চড়া হলেও আমের বেচাকেনা বেড়েছে।

রাজশাহীর আম, নামেই যার খ্যাতি। আর রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। তবে কেবল নামেই কি আমের রাজধানী? মোটেও নয়। দর্শন, গুণ ও ফলেই পরিচয়। তাইতো বছর ঘুরে চির চেনা রূপ নিয়ে ফিরেছে রাজশাহী। সর্বত্রই এখন আম আর আম। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে ‘আমময়’ হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের এ ছোট্ট পরিপাটি শহরটি।

হাটে-মাঠে, পথে-প্রান্তরে, বাগানে-বাগানে, পাড়ার অলিগলিতে এখন শুধুই আমের হাঁক-ডাক। রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক ও মোহনাগুলো এখন কাঁচা-পাকা আমে ছেয়ে গেছে। বড় বড় ঝুড়ি ও প্লাস্টিকের খাঁচা বোঝাই করে আম আসছে রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকার নতুন-পুরোনো বাগান থেকে।

তাই রাজশাহীর বাতাসে এখন আমের মৌ-মৌ সৌরভ ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে ঝড়, তাপদাহ ও শিলাবৃষ্টিতে এ বছর কমেছে আমের ফলন, বেড়েছে দাম।

রাজশাহীর স্বাদের আমে এখনও লোভের থাবা বসাতে পারেনি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাই অপরিপক্ক আমে কেমিক্যালের মিশ্রণ নয়, বেঁধে দেয়া সময়েরও পরেই পরিপক্ক আম ভাঙা হচ্ছে গাছ থেকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে হাট-বাজার থেকে বিদায় নিয়েছে গোপালভোগ ও মোহনভোগ। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানান জাতের বাহারি নামের স্বাদের আম।

বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এই জনপদে। রাজশাহীজুড়ে এখন কেবল আমেরই রাজত্ব। বাগানে বাগানে চলছে গাছ থেকে আম ভাঙার কাজ। এতে শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ব্যবসা।

কেবল হাট-বাজার নয়, আম কেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। রাজশাহী অঞ্চলের দুইটি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে গোপালভোগ আম নেই। ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর আম আছে। আর চলতি সপ্তাহে বেশি উঠেছে ল্যাংড়া জাতের আম। রয়েছে লক্ষণভোগও। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের খাঁচায় করে এ আম হাটে আনছেন। দর-দামের পর ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দূর-দুরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দিন-রাত সমানতালে চলছে আমের কারবার। এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি।

বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী রমজান আলী জানান, রোববার বাজারে প্রতি মণ ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) আম ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং ল্যাংড়া আম ২ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি মণ লক্ষণভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। আর আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলন কমের কারণে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও কোনো সমস্যা হবে না। যে ফলন হবে তা দিয়ে রাজশাহীসহ সারাদেশে আমের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলেও করেন কৃষি বিভাগের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন