কুষ্টিয়ার জগতী গ্রামের মোসাঃ ফরিদা (৫৪) দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন সংগ্রামী নারী। তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম, এবং আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সংগ্রামের শুরুর কথা
ফরিদার শৈশব কেটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার অঞ্জনগাছি গ্রামে। তার বাবা ছিলেন ক্ষেতমজুর। আটজনের পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাবার আয়ে চলা ছিল কষ্টকর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পরিবারের চাপে বিয়ে হয় মোঃ শাহাদত শেখের সঙ্গে।
বিয়ের পরও লেখাপড়া চালানোর চেষ্টা করেছিলেন ফরিদা। ১৯৯০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্বামীর সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিলেও এক সাইকেল দুর্ঘটনার কারণে তা আর সম্পন্ন হয়নি। এদিকে, স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ায় এবং শ্বশুরবাড়িতে দারিদ্র্যের কারণে তিনি ভীষণ সংকটে পড়েন।
জীবনের মোড় ঘোরা
পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে উদ্যমী হয়ে উঠেন ফরিদা। মামা শ্বশুরের সহায়তায় কুষ্টিয়া সুগার মিলে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯১ সালে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের একটি সাব সেন্টারে কাজ শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়ায় আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হলে, তিনি সেখানে কাজের সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি মাসে ৯,০০০ থেকে ১৪,০০০ টাকা আয় করেন।
উন্নতির চিত্র
ফরিদা একসময় ঘুমানোর জায়গা না পেলেও আজ নিজের ৪ ইউনিটের একটি দোতলা বাড়ির মালিক। এর মধ্যে তিনটি ইউনিট ভাড়ায় দিয়ে বাড়তি আয় করেন। তার বড় মেয়ে সুমাইয়া মাস্টার্স পাস করে বিবাহিত। ছোট দুই জমজ মেয়ে ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ফরিদা বলেন, “আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন আমার বাড়ি। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ কর্মই আমার সবকিছু। এখানে কাজ না পেলে হয়তো পথে পথে হাত পেতে চলতে হতো।”
তিনি আরও বলেন, “ছুটির দিন বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। মনে হয় ফাউন্ডেশনে চলে যাই। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এই প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাক, যাতে আমার মতো অসহায়রা এখান থেকে কাজ পায়।”
সমাজে উদাহরণ
মোসাঃ ফরিদার জীবন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের আরও অনেক নারীর জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তার সংগ্রাম প্রমাণ করে, সঠিক উদ্যোগ এবং সহায়তা পেলে দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।