ইউটিউব দেখে চরে জমে থাকা পানিতে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী

419

bg20191222085231বর্ষা মৌসুম শেষে চর জেগেছে আড়িয়াল খাঁ নদে। আগামী বর্ষার আগ পর্যন্ত জেগে থাকবে এ চর। চরের একপাশে কিছু জায়গাজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

শিবচরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আড়িয়াল খাঁ নদের হাজী শরিয়তউল্লাহ সেতুর উত্তর প্রান্তে নদীর জেগে ওঠা চরের একপাশে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে সেখানে হাঁস পালন করছেন বিপ্লব নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।

প্রায় তিন মাস আগে গড়ে ওঠা খামারটিতে হাঁস রয়েছে এক হাজারের বেশি। ইউটিউবে হাঁসের খামার দেখে এরকম খোলা স্থানে নদীর জলাবদ্ধতায় হাঁসের খামার তৈরি করেছেন তিনি।

সরেজমিনে হাঁসের খামার ঘুরে দেখা গেছে, আড়িয়াল খাঁ সেতুর উত্তর-পূর্ব পাড়ে চর জেগে পানি শুকিয়ে গেলেও নদীর ঠিক পাড়েই কিছু গভীর অংশে পানি আটকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ওই অংশটুকু বেশ গভীর থাকায় শুকনো মৌসুমেও শুকায় না পানি। মূল নদীর সঙ্গে এর কোনো সংযোগও নেই। এরকম একটি স্থানের চারপাশে হালকা নীল রঙের জাল দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পালন করা হচ্ছে হাঁস। জলাবদ্ধ ওই জায়গার মধ্যেই সাঁতরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য হাঁস। তার পাশেই চরের উপর নিচু করে তৈরি করা হয়েছে আলাদা তিনটি ঘর। দু’টিতে রাতে হাঁস রাখা হয়। অন্যটিতে হাঁস দেখাশোনা করার লোক থাকে।

১০ দিন বয়সী ‘খাঁকি ক্যাম্বল’ জাতের প্রায় দেড় হাজার হাঁস নিয়ে খামারটি শুরু করেন বিপ্লব। বর্তমানে হাঁসের বয়স প্রায় তিন মাস। এই হাঁসের বয়স সাড়ে তিন মাস হলে ডিম পাড়া শুরু করে, জানান তিনি।

আলাপকালে হাঁসের খামারি বিপ্লব জানান, নদীর স্থানটি খোলামেলা। পর্যাপ্ত রোদ, বাতাস আছে। আর জলাবদ্ধ অংশে পানিও রয়েছে পর্যাপ্ত। এরকম খোলামেলা পরিবেশে বেশ দ্রুত বেড়ে উঠছে হাঁসগুলো। হাঁস পালনের জন্য এরকম স্থান উপযুক্ত বলে জানান তিনি।

‘খাঁকি ক্যাম্বল’ প্রজাতির এ হাঁস পুকুর, জলাশয়, ডোবা-নালা যেকোনো স্থানেই পালনের উপযুক্ত। তবে নদীর খোলা চর হলে পরিবেশ ভালো থাকে। প্রাকৃতিক খাবারও পানিতে থাকে। এ প্রজাতির হাঁস সাড়ে তিন মাস বয়স থেকে একটানা আড়াই বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ডিম দেয়। ঠিকমত যত্ন নিলে রোগ-বালাইও কম হয় এ হাঁসের।

খামারি বিপ্লব বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়ে নদীর চরে খামারটি তৈরি করেছি। ৪৫ টাকা দরে হাঁসের বাচ্চা কিনে আনি। হাঁসের বয়স এখন তিন মাসের মতো। সাড়ে তিন থেকে চারমাসেই ডিম পাড়া শুরু করবে। স্থানটি খোলামেলা হওয়ায় হাঁস পালনের জন্য আদর্শ স্থান বলে মনে হয়েছে। এজন্যই এখানে খামারটি তৈরি করেছি।

তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিতেই থাকে হাঁস। উপরে উঠে হাঁটাহাঁটি করে। রোদ পোহায়। রাতে হাঁস ঘরে ঢুকে পড়ে। খাবার হিসেবে হাঁসকে সকাল ও বিকেলে ধান দেওয়া হয়। দুপুরে কুড়া-ভুষি একত্র করে মিশিয়ে দেই।

বিপ্লব বলেন, আগামী বর্ষায় যদি চর ডুবে যায় সেসময় হাঁসগুলো বাড়িতে নিয়ে রাখবো। শুকনো মৌসুমে এখানেই থাকবে। শিয়াল বা হিংস্র প্রাণী থেকে রক্ষার জন্য নীল রংয়ের জাল দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।

হাঁসের খামারের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার আশা ব্যক্ত করে বিপ্লব হোসেন বলেন, কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই ইউটিউব দেখে আগ্রহী হয়ে হাঁসের খামার করেছি। হাঁসগুলো বেশ সুস্থ রয়েছে। তেমন কোনো সমস্যা এখনো হয়নি। আমি মনে করি হাঁস পালন করেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব, কারণ এ হাঁস দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটানা ডিম দেয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯জানু২০২০