মো. রুবেল ইসলাম তাহমিদ, মুন্সীগঞ্জ থেকে: ভারী বর্ষণ আর প্রবল ঝড়ে উত্তাল পদ্মাকে উপেক্ষা করে প্রতি বছরের মতো এবারও বেশিরভাগ জেলেরা ছুটেছেন পদ্মার কোলে রূপালি ইলিশের টানে। ‘ইলিশের রাজধানী’ খ্যাত মুন্সীগঞ্জ ও মেঘনা নদীতে গত এক সপ্তাহে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
জেলেরা ২/৩ মাস অলস সময় কাটানোর পর পেয়েছে নতুন গতি। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে দিগুন। এতে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার জেলের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
লৌহজংয়ের জেলেপাড়ায় চলছে আনন্দ উৎসব। এদিকে জেলেরা দাদনের বোঝা ও সংসারের ঘানিতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছিল। এখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পাওয়ায় তারা আনন্দে আত্মহারা। বাজারে ইলিশের দাম ভালো থাকায় উপজেলার জেলে ও ব্যবসায়ী আড়তদারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আর বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতে দেখা গেছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে মাওয়া পদ্মাতীর এলাকায় মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায় পর্যাপ্ত বড় বড় সাইজের ইলিশ। এখান থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে মাছগুলো, আর সাইজও বড়। এর মধ্যে ২ কেজি ৯শ গ্রামের ওজনের ইলিশও রয়েছে বেশকটি। এছাড়া বেশিরভাগই এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ। এ সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৯শ টাকায় প্রতিপিস।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, মুন্সীগঞ্জ জেলার পাঁচ হাজার জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছ ধরা ও বিক্রি করাই তাদের একমাত্র উপার্জনের পথ। তবে সরকারের জাটকা ধরা নিষেধের সময় তারা নদীতে মাছের জন্য কেউ নামেনি।
২ কেজি ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশটি বিক্রি হয়েছে মাওয়া পদ্মাতীরের মো. হামিদুলের আড়তে। ভোরে ইলিশটি সুরেশ্বর এলাকার পদ্মা থেকে এক জেলে এ মাছ ইলিশটি আড়তে আনেন। এ সময় মাছটি তিনি ডাকে বিক্রি করেন পাঁচ হাজার টাকায়। মাওয়া এলাকার পাইকারি বিক্রেতা মো. মুকলেছ এ মাছটি কেনেন। তিনি ইলিশটি ১ হাজার টাকা লাভে ঢাকার এক পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন।
একইসঙ্গে রাজধানী থেকে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বড় সাইজের ইলিশের জন্য খোঁজ নিয়ে থাকেন। ফলে চাহিদা ও শখের কারণে দামও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
ইলিশ কেনার আশায় দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটছেন বহু আলোচিত পদ্মাসেতু এলাকার মাওয়ার পদ্মাপাড়ে। এসব কিছুকে কেন্দ্র করেই পদ্মার রূপালি ইলিশের বাজারে এখন উত্তাপ। তরতাজা একটি পদ্মার ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।
রাজধানীর বিভিন্ন পাইকার, স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের পাশাপাশি বিত্তবান অনেক ক্রেতা খুব ভোরে মাওয়ায় এসে এসব ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বেশি দাম দিয়ে।
মজিদ মৎস্য আড়তের মালিক মো. মজিদ শেখ জানান, গত কয়েকদিন থেকে পদ্মার বড় ইলিশের সঙ্কট নেই। এক কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র দু’দিন আগেও ১ কেজির সামান্য কম ওজনের ৪টি ইলিশ ১২শ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছে। কিন্তু শুক্রবার থেকে এরকম ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২শ টাকায়।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার ভোরে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর এলাকায় পদ্মা থেকে জেলেরা বড় বড় বিভিন্ন সাইজের কয়েকটি ইলিশ মাছ তার আড়তে আনেন। এ সময় মাছগুলো তিনি ডাকে বিক্রি করেন ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়।
এক কেজির বেশি ওজনের বড় সাইজের ইলিশ এখন পাওয়া যাচ্ছে সব আড়তে। তবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম