আম পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। টসটসে রসে ভরা আম আসলে তিনবার খাওয়া হয়ে যায়। প্রথমত রঙ দেখেই একবার ঢোক গিলতে হয়। ঘ্রাণেই একবার পেট ভরে, আরেকবার মুখে পুরে।
ফলের রাজা নিয়ে সাধারণের যখন এই অবস্থা, তখন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কি আর বসে থাকতে পারে! প্রতিনিয়ত সরকারি এ সংস্থাটি করে যাচ্ছে নিরলস গবেষণা। একঝাঁক একনিষ্ঠ বিজ্ঞানী প্রতিবছরই নিত্যনতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন কিভাবে উন্নয়ন করা যায় আমের। কত স্বাদ, রঙ আর পুষ্টিদায়ী জাত উদ্ভাবন করা যায়।
এই যখন অবস্থা, তখন সংস্থাটি একের পর এক ভিন্ন মাত্রার প্রজাতি যোগ করছে ফলের বাগানে। সংস্থাটি দীর্ঘকাল ধরে গবেষণা করে এমন একটি জাত আবিষ্কার করেছে যা বছরে একবার নয়, তিন-তিনবার ফল দেয়। এতে সারাবছরই বাজারে পাওয়া যাবে আম। আর এমন দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যখন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে এ জাতটি।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাহাড়তলী উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্র এ জাতটির আবিষ্কার করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে বারি-১১। একে বলা হচ্ছে বারমাসি জাতের আম।
স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের পর নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে ২০১৫ সালে এ জাতটি মুক্তায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ দেশীয় আম। কৃত্রিম হাইব্রিড নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়ণে সৃষ্ট।
একটি গাছের আমের আঁটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে যে গাছ হয়েছে তার ফল দেখে বেছে বেছে একটি নমুনা নেওয়া হয়েছে। যেটি কিনা বছরে তিনবার ফল দেয়। আর এ জাতের সৃষ্টি হয়েছে মৌমাছির মাধ্যমে। মধু সংগ্রহের জন্য যখন মৌমাছি কোনো একটি জাতের আমের মুকুলে বসে, তার আগে হয়তো অন্য কোনো জাতের মুকুল থেকেই সে ওঠে আসে। আর এভাবেই পরাগায়ণের ফলে এই ধরনের সংকরায়ণ ঘটেছে। এ জাতটির এভাবেই সৃষ্টি। যা পাহাড়তলী উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণের পর নিশ্চিত হয়েছে।
বারি-১১ বা বারমাসি এ আমের জাতটি এখন দেশের সব উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রেই চাষ হচ্ছে। বিষয়টি জানা গেল রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে। এ কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হামিম রেজাই বিষয়টি জানালেন বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই আমের জাতটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এতে সারাবছরই মানুষ আমের স্বাদ নিতে পারবেন।
উচ্চফলনশীল এ প্রজাতি বছরে তিনবার ফল দেবে। দেশের যে অঞ্চলের মাটিতেই এটি চাষ করা যাবে। এমনকি বাড়ির খোলা জায়গায়, বাসার ছাদে টবের মধ্যেও এটি চাষ করা যাবে। এ জাতের আম গাছ ফল দেবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি, এপ্রিল ও জুলাই-আগস্ট মাসে। অর্থাৎ সারাবছরই আম খাওয়া যাবে, যদি কেউ এটি চাষ করেন।
বারি-১১ জাতের আমটি খেতে খুবই সুস্বাদু। তবে আঁশ আছে। এটি আকারে লম্বাটে, অনেকটা অংকের ৫ এর মতো দেখতে। প্রতিটি আমের গড় ওজন হয় ৩১৭গ্রাম।
কাঁচা আমের ত্বক হালকা সবুজ। আর পাকলে ত্বক হয় হলুদাভ সুবজ। লম্বায় ১১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৭ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার এবং পুরু ৭ সেন্টিমিটার। আঁটির ওজন ২৫ গ্রাম অর্থাৎ পাতলা আঁটির আমটির ৭৯ ভাগ খাওয়া যায়। মিষ্টতার পরিমাণ ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ টিএসএস।
এই গাছে একসঙ্গে পুরোটা জুড়ে মুকুল আসে না। তাই একটি মুকুলের আম যখন পাকার উপযোগী তখন আরেকটিতে আমের আকার মাত্র মার্বেলের মতো হয়। এতে একটি গাছে এক অংশের আম যখন শেষ হবে তখন অন্য অংশের আম পাকতে শুরু করবে। এভাবে সারাবছর ধরে চলতে থাকবে।
ড. হামিম রেজা বলেন, আমরা শিগগিরই এই আমের জাতটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবো।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৫জানুয়ারি২০২১