দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার তহিবুর রহমান। জয়পুরহাট সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি তিনি এ বছর ধারদেনা করে চার লাখ টাকা মাছের প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। এ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু এবারের বন্যায় সব ভেসে গেছে। চারদিকে তিনি এখন অন্ধকার দেখছেন। এবারের বন্যা তহিবুরের মতো এমন অনেকের স্বপ্নই ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, বন্যায় সারা দেশের আট বিভাগে প্রায় ৭৭৫ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সহায়তার সুপারিশের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা বলছে, শিগগিরই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হবে।
মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এবারের বন্যা মৎস্য সম্পদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। আমরা এ ক্ষতি নিরূপণ করেছি। এখন তা কীভাবে পুষিয়ে ওঠা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।’
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ৩৬টি জেলার মৎস্য সম্পদ এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মালিকের পৌনে দুই লাখের বেশি খামার ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভেসে গেছে ৫২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি মাছ। আর পোনা ভেসে গেছে ১১০ কোটির বেশি।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে মোট ৩৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপাদিত হয়।
মাছ বা পোনা ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটির টাকার।
মৎস্য সম্পদের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মৎস্য চাষ) মো. গোলজার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতি জেলা থেকে তথ্য নিয়ে বিভাগ অনুসারে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছি। এই ক্ষতির হিসাব শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘মৎস্য সম্পদের ক্ষতি পুষিয়ে আনার জন্য চাষিদের মাঝে মাছের খাদ্য, পোনা, সার ও চুনের চাহিদা চাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্ষতিপূরণের বরাদ্দ পেলে তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি রংপুরে:
এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগে। এই বিভাগের আটটি জেলায় ৬৪ হাজার ২৫২ জনের প্রায় ১ লাখ খামারে ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমির ৩২ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। যার দাম ২৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ৬২ কোটি টাকা। এ ছাড়া মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এ বিভাগের জেলা দিনাজপুরে ৪০ একর এলাকা নিয়ে ‘সুখ সাগর’ নামের মাছের খামারটি ইজারা নিয়েছেন আজম খান। বন্যায় এখানকার সব মাছ বের হয়ে গেছে। আজম খান আজ রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তার প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আজম খানের মতো খামারিরা এই হঠাৎ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণ মওকুফের বা নতুন করে ঋণ চান। তবে ঋণ মওকুফ বা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা এখনো নেই বলে জানান প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ভাবছেন বলে জানান তিনি।
ক্ষতির নিরিখে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে খুলনা বিভাগে। ছয় জেলায় ৬ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে, যার দাম ১৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৯৩ লাখ। মোট ক্ষতির পরিমাণ ২২৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
বরিশাল বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করেনি মৎস্য অধিদপ্তর।সূত্র: প্রআ
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম