পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় এবার বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক করলা চাষ হয়েছে। উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই সারা বছর এই ইউনিয়নে উৎপাদিত হয় বিষমুক্ত নানা জাতের সবজি। এবার বর্ষা মৌসুমে অধিক ফলনশীল ও আকর্ষণীয় হাইব্রিড করলা ‘বুলবুলি ও টিয়া’ জাতের ব্যাপক ফলন হয়েছে। যার ফলে উত্তরাঞ্চলের সবজির ওপর নির্ভরতা দিন দিন কমতে শুরু করেছে এই জেলাতে।
লবণাক্ত জমিতে কান্দি পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের করলা বীজ বপন করে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলে কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে করলা চাষ করতে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। একবার মাচা করলে তিন বছর পর্যন্ত যায়। আর এক বিঘা জমিতে ১২ মণ করলা উৎপাদন হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষকরা। করলা চাষের ক্ষেতগুলো সবুজে ছেয়ে গেছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এসব ক্ষেত থেকে করলা ছিড়ে কেউ কেউ বস্তা করছে। আবার অনেকে গাছের আগাছা পরিষ্কারসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত সবজি চাষি কেউ মাথায় আবার কেউ ভ্যান ও রিকশায় কিংবা নৌকায় করে করলা নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। এসব করলা স্থানীয় পাইকারের মাধ্যমে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন বাজার দখল করেছে এই ইউনিয়নের করলা। স্থানীয় আড়ত হয়ে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে করলা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কুমারমারা গ্রামের করলা চাষি জাকির হোসেন বলেন, আজ থেকে আরও একমাস আগে পাখিমারা বাজার থেকে প্রতিদিন ২০ টনেরও বেশি করলা ও অন্যান্য সবজি দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। উৎপাদনের প্রথমদিকে ১০০ টাকা কেজি দরে দাম পেলেও এখন ২৫ টাকা দরে করলা বিক্রি করা হচ্ছে এরপরেও কৃষকের লাভ কারণ এখানে যে পরিমাণ করলা হয়েছে তা যদি ৫ টাকা দরে বিক্রি হয় তারপরও কৃষকের লাভ।
তিনি আরও বলেন, প্রতি শতাংশে মাচা ও সারসহ ৫০০ টাকা খরচ হয় কিন্তু প্রতি শতাংশের করলা বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। প্রতি শতাংশে সপ্তাহে এক থেকে দেড় মন করলা পাওয়া যায়। এই ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর করলা চাষ হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও দেড় একর জমিতে করলা চাষ করেছেন সুলতান গাজি। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের চারপাশে লবণাক্ত পানি। এখন বর্ষাকাল লবণাক্ত পানির পরিমাণ কম থাকে এজন্য এই বর্ষা মৌসুমে করলা চাষে ভালো লাভবান হওয়া যায়। আমাদের গ্রামের করলা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রয় হয়। করলা চাষ করে এখানকার কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছে। আগে এই অঞ্চলে শুধু ধান চাষ করা হতো এখন এই ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ করছে এতে করে কৃষকরা অনেক সচ্ছল হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় সারা বছরই করলা চাষ করা যায়। লাগানোর ৪৫ দিনের মধ্যে করলা বিক্রির উপযোগী হয়।
পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল গনি বলেন, একটা সময় ছিল উত্তরাঞ্চলের সবজির ওপর নির্ভর করে চলতে হতো পটুয়াখালীর মানুষকে। তবে এখন আমাদের এলাকার সবজি বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। করলার এবার বাজার দরও ভালো। আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। সবজির চাষের জন্য এলাকা জুড়ে অনেক কৃষক কাজ করছে। আমাদের আড়ৎগুলো সবজিতে ভরপুর থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে সবজি কিনে আমরা পাইকারি বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালীর নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষি পণ্য এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। এখানকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে বহু বছর আগে। এখানের উৎপাদিত করলা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি কেজি করলা ১০০ টাকার বেশি বিক্রি করে কৃষকরা অধিক মুনাফা অর্জন করছে। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে করলা আবাদ হয়েছে। চাষিদের উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।