করোনা দুর্যোগে মাছ চাষিদের করণীয়

452

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব আজ মহা সংকটের মাঝে পড়েছে। এটা একটি মহা বিপরযয় বা দূর্যোগ হিসাবে মানব সভ্যতাকে চ্যালেন্জের মাঝে ফেলেছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগকে মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার দৃঢ় মনোবল এবং ধৈর্য ধারণ করা। আমাদের দেশের মানুষ অনেক বড় বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে অত্যন্ত সফলতার সাথে।

এবারের দূর্যোগ একটু ব্যতিক্রম। মানাষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একবারেই থেমে গেছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে কেউ বলতে পারে না। কে বাচবে কে বাচবেনা সেটাও কারো যানা নাই। সর্বস্তরের মানুষ আজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মাছ চাষি, হাঁস-মুরগির খামারী ও কৃষক সকলেই নানা ভাবে, নান মাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন। বছরের এ সময়টা মাছ চাষিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অনেকে মাছ বিক্রয় করে নতুনভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রকৃত পক্ষে মার্চ-এপ্রিল মাসই পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার সময় কারণ গরমে মাছ বৃদ্ধি পায় দ্রুত। অনেকেই হ্যাচারি থেকে মাছের রেণু সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে পোনা উৎপাদন করেন। কবে নাগাদ জীবন যাত্রা স্বাভাবিক হবে কেউ যানে না।

এরকম একটি অনিশ্চিত অবস্থার মাঝে মাছ চাষিদের আগামী দিনগুলোতে কি করা উচিত তা বলা খুবই কঠিন। তার পরেও মানুষ আশা নিয়েই বেচে থাকে। সেভাবেই সে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পণা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। নির্দিষ্টভাবে সকলের জন্য অনুসরণীয় কার্যক্রম বা নির্দেশনা প্রদান খুবই কঠিন কাজ। তার পরেও আমাদের কিছু সাধারণ পরামর্শ রহিল মাছ চাষি ভাইদের জন্য, যা নিম্নে আলোচনা করা হল-

১) যাদের পুকুরে বিক্রয় উপযুক্ত মাছ আছে
প্রথমত কিছু মাছ বিক্রয় এর চেষ্টা করতে হবে মাছের ঘনত্ব কমানোর জন্য। দাম কম হলেও স্থানীয় বাজারের চাহিদা বুঝে অন্যদের সাথে সমন্বয় করে বিক্রয় করতে হবে অবশিষ্ট মাছের পরিমাণ বা স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য। পুকুরের একটি ধারণ ক্ষমতা আছে। জীবভর তার বাহিরে চলে মাছের নান প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু মাছ কমিয়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন আনতে হবে।

ক) বাজারে খাদ্যের সংকট আছে বা নাই সেটা বিবেচনার সময় এটা নয়। চাষের পুকুরে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কম খাবার দিতে হবে যাতে মাছের ওজন কমে না যায়। এ সময় মাছের দ্রুত বর্ধনের বিষযটি বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। কারণ বিদ্যমান অবস্থায় মাছের বাজার দর যেমন কম তেমন বাজারে ইচ্ছামত মাছ বিক্রয়ও সমস্যা।

খ) নির্ধারিত তৈরি মাছের খাবার সরবরাহ না পেলে কমকরে হলেও স্থানীয় ভাবে প্রাপ্য খৈল-ভূষি বা ধানের চূর্ণ বা ভূট্টা চূর্ণ বা অটোকুড়া বা চাউলের খুত যে এলাকায় যা পাওয়া যায় তা মাছের খাবার সরবরাহ করতে হবে।

গ) মাছের খাবারের সরবরাহ থাকলে সাধ্য মত মজুত করতে হবে। তবে পুকুরে খাবারের ব্যবহার মাত্রা স্বভাবিকের তূলনাই কম দিতে হবে।

ঘ) সার বা ইস্ট মোলাসেস পদ্ধতিতে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবারের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিশেষ করে শিং-মাগুর, পাবদা-গুলসা- টেংরা মাছ চাষের পুকুরের ক্ষেত্রে।

২) পুকুর শূন্য যারা মাছ চাষ করতে ইচ্ছুক
যারা মাছ চাষ নিয়ে ভাবছেন তাঁরা অধিক ফলনশীল মাছচাষ যেমন পাংগাস বা তেলাপিয়া ও কৈ মাছচাষ এ সময় পরিহার করা ভালো। এমাছ গুলো চাষ করলেও স্বল্প ঘনত্বে করতে পারেন। কার্প জাতীয় বা প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভরশীল মাছ চাষের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। পুকুর কোনভাবেই ফেলে রাখা যাবে না কারণ পুকুরের ভাড়া গুনতেই হবে এবং সংকট কেটে গেলেই মাছের চাহিদা বেড়ে যাবে।

৩) পোনা চাষি
এখন পোনা উৎপাদনের সর্বোত্তম সময়। সংকটের কারণে অনেকে সিদ্ধান্ত হীনতায় থাকতে পারেন। কিন্তু হাল ছেড়ে বসে থাকা যাবে না অন্যান্য বছরের থেকে এবারের পরিকল্পনা কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। রেণু চাষের পরিমাণ কমাতে হবে কিছুটা স্বল্প ঘনত্বে পোনা রাখতে হবে। সম্পূরক খাবার কমাতে হবে, প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে পোনার চাহিদা কিন্তু বেড়ে যাবে সংকট পার হলেই।

৪) পরিবহণ জনিত সমস্যা
সরকার কৃষি পণ্য, মাছ-মাংশ, দু-ডিম ও মৎস্য ও পশু খাদ্য পরিবহন লকডাউনের বাহিরে রেখেছেন। এ ধরণের সমস্যা সমাধানে স্থানীয় মৎস্য দপ্তর সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করবে। এ জন্য স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হল।

বিদ্র: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সামাজিক দূরত্ব বজাই রেখে সকল কাজ করতে হবে। নিজে বাচলে জীবনে অনেক কিছ করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ ভৌগলিক কারণে অক্সিজেন ঘাটতির কারণ ও তার সমাধান
লেখকঃ মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ
উপপরিচালক, রাজশাহী মৎস্য বিভাগ, রাজশাহী

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫এপ্রিল২০