কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ করবেন যেভাবে

2858

বাংলাদেশের আবহাওয়া,জলবায়ু ও মাটি চাষাবাদের উপযোগী হওয়াতে নানা রকম ফলের চাষ করা হয়। তার মধ্যে কুল অন্যতম। বিভিন্ন রকম কুলের মধ্যে কাশ্মীরি আপেল কুল অন্যতম। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। স্বাদ হালকা মিষ্টি অনেকটা বাউকুলের মতো। নতুন এই জাতের কুল ঝিনাইদহ সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের দুই কৃষক তাদের তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এর আগে আপেল কুল চাষ হলেও নতুন জাত কাশ্মীরি আপেল কুল এবারই প্রথম। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউকুলের থেকে আকারে বেশ বড় এই কাশ্মীরি আপেল কুল।

কৃষিবিদদের মতে, উর্বর বা অনুর্বর জমিতে কম খরচে সহজে আপেল কুল চাষ করা যায়। তবে, চাষের আগে চাষিদের সঠিক জাতের চারা নির্বাচন করতে হবে। নতুন চাষিরা গাছ লাগানোর আগে ভালো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে গুণমানের চারা লাগাতে পারলে ভালো ফলন পেতে পারেন।

বর্ষার পর কাশ্মীরি আপেল কুলের চারা লাগানো উচিত। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এর চারা বোনা হয়। গাছ থেকে গাছ ও সারি থেকে সারির দূরত্ব ১০ ফুট বাই ১০ ফুট রাখতে হবে। বিঘা প্রতি ২০০টির বেশি গাছ লাগানো যাবে। আকারে ছোট হওয়ায় গাছটি খুব সহজে পরিচর্যা করা যায়।

পরিণত গাছে আগস্টে ফুল ধরতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে ফুলের সময়। এসময় কোনো ধরনের পোকানাশক স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না। ফুল ধরলে প্রতি ১০ লিটার জলের সঙ্গে ৩ মিলি ফাইটোনাল এম আই গুলে স্প্রে করতে হবে। এতে ফলের আকার বাড়বে এবং ফলন ভালো হবে।

গাছে প্রথম বছরেই বিঘা প্রতি ৬০-৭০ কেজি ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। পরবর্তীতে গাছের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন বাড়তে থাকে। বছরে দু’বার ফলন পাওয়া যায়।

এপ্রিলে ফলন তোলার পর পরিচর্যার জন্য বেশি উচ্চতার গাছগুলি কেটে দিতে হয়। এছাড়া ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে মাছি ক্ষতি করতে পারে। মাছির হাত থেকে ফল রক্ষা করতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে চাষ করতে হবে। মাছি ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে দমন করতে হবে। কিংবা মিষ্টি গন্ধযুক্ত গুঁড় বা পাকা ফলের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে রাখলে এর মধ্যে আকৃষ্ট হয়ে মাছি মারা যাবে।

সফল চাষি রিয়াজ উদ্দীন এর কথা

কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কুলচাষি রিয়াজ উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি চলতি বছরের বৈশাখ মাসে সাতক্ষীরা থেকে ১০ হাজার টাকায় ২০০ চারা কিনে এনেছিলেন। যেগুলো প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আনা হয়েছিল। এই চারা এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। মাত্র ৯ মাস পর এবারই প্রথম ফল এসেছে। একেকটি গাছে ফলও হয়েছে অনেক। আর ১৫ দিন পর গাছ থেকে কুল তোলা যাবে।

রিয়াজ উদ্দীন উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের মৃত আবু বক্কর বিশ^াসের ছেলে। তিনি গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির কুল চাষ করছেন। নতুন জাতের কাশ্মীরি কুলের পাশাপাশি এবারও তার আট বিঘা জমিতে বাউকুলের চাষ রয়েছে।

কুলচাষি রিয়াজ উদ্দীন আরও জানান, চারা রোপণ, চারপাশে ঘেরা ও পরিচযার্ দিয়ে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি, প্রথম বছরেই প্রায় দুই লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারব। তিনি জানান, সাধারণত আপেল কুল ও বাউকুল ৩০-৭০ টাকা প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হয়। কিন্তু এই নতুন জাতের কুল ১০০-১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হবে। এ ছাড়া অন্য কুলের থেকে এই কুলের চাহিদাও বেশি। ইতোমধ্যে পাইকার ব্যাপারিরা জমিতে এসে দাম করে গেছেন। তার সঙ্গে সফর আলী নামের আরও এক কৃষক যৌথভাবে এসব কুলের চাষ করেন বলে যোগ করেন তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম আবদুর রউফ জানান, চারা উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে গান্নার স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গাছের ডাল কেটে বাডিং পদ্ধতিতে এই চাষের সম্প্রসারণ করা যাবে।

তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ টাইমস এবং যায় যায় দিন

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮জুন২০