কুড়িগ্রামে জমির আইলে তেজপাতা চাষ

880

2017-10-14_2_910620
কুড়িগ্রাম থেকে: জেলায় বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি জমির আইলে পরিবেশবান্ধব সুগন্ধী তেজপাতা চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

জেলার ছিনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বড় চাষী সাদেকুল হক নুরু সাড়ে ১২ একর জমির আইলে ৭ শতাধিক তেজপাতা লাগিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং তিনি বছরে আয় করছেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি লোকজন বাসাবাড়িতেও লাগাচ্ছে তেজপাতার চারা।

সাদেকুল হক নুরু জানান, ২০১৩ সালে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে ১০ একর জমির আইলে ৫ শতাধিক তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। চারা রোপন পর্যন্ত তার দেড়শ টাকা খরচ হয়েছে। লাগানোর সময় পটাশ, ডিআইবি ও ব্রিফার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর কোন খরচ নেই। এক বছর পর প্রথম ১০ হাজার টাকায় পাতা বিক্রি করেন। এরপর গাছগুলো বড় হয়ে যায় এবং লতাপাতা বেড়ে যায়। ফলে আয়ও বাড়তে থাকে। বছরে দু’বার তেজপাতা বিক্রি করা যায়। গাছের কুচি পাতা বের হওয়া শেষ হলেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে পাতা কিনে নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, জমির আইলে তেজপাতা চাষের পাশাপাশি জমিতে তিনি ধান, আলু, ভুট্টা ও সবজি চাষ করেছেন। এতে ফলনের কোন ক্ষতি হয় না। গত বছর তিনি আরও আড়াই একর জমির আইলে নতুন করে তেজপাতার চারা লাগিয়েছেন। গাছ বড় হলে একরে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। একবার গাছ রোপণ করলেই হয়। রোপন করার কিছুদিন পর থেকেই তেজপাতা বাড়তে থাকে। শুধু বছরে দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

ওই এলাকার রেহেনা ও জোলেখা জানান, ওমারগুলার দেখাদেখি হামরাগুলাও বাড়ীর মধ্যে তেজপাতা নাগাছি। বছরে বছরে তেজপাতা বিক্রি করি। অনেক টেকা পাই। তেজপাতা গাছ কোন ক্ষতি করে না।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন জানান, তেজপাতা পাহাড়ি এলাকার গাছ। এটি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। লম্বায় ১৫ থেকে ১৬ মিটার উঁচু হয়। রান্নায় স্বাদ ও সুগন্ধি আনতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও এর রয়েছে ঔষধী গুণাগুণ। শরীরে ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে, কোলেস্টরেল মাত্রা কমাতে এবং হ্নদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের নানা রোগ সারিয়ে তুলতেও এর গুণাগুণ অসাধারণ। ঠান্ডাজনিত বা উচ্চভাষজনিত গলা ভাঙা রোগ সারাতে তেজপাতার রসের রয়েছে অসাধারণ ওষুধি গুনাগুণ। এটি চিরশ্যামল এবং গাছটি বসতবাড়ির শোভাও বৃদ্ধি করে। দেশে মোট মসলার চাহিদা ৩১ লাখ টন। উৎপাদন হয় ১৭ লাখ টন। ঘাটতি প্রায় অর্ধেক। ফলে প্রতিবছর আড়াই হাজার কোটি টাকার মসলা আমদানি করতে হয়। যা জমির আইলে চাষ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, এ উপজেলায় মানুষের দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি। তার পরিবর্তে আমরা তেজপাতা গাছ লাগাতে মানুষকে উৎসাহিত করছি। তারই অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২০ জন চাষি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেজপাতা চাষে এগিয়ে এসেছে। এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং ইউক্যালিপ্টাস গাছের পরিবর্তে তেজপাতা চাষে আগ্রহ বাড়বে।সূত্র: বাসস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম