কৃষকদের মাঝে সবুজ জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘সুফলা নওগাঁ’

289

[metaslider id=”14069″]

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ সংবাদদাতা: কৃষি মানে কৃষক আর কৃষক মানে আমাদের সবুজ বাংলাদেশের চালক। কৃষি ছাড়া আমাদের সবকিছুই অচল। তাই দিন দিন কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে পরিবেশবান্ধব আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এই সব প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসলের ফলন আর লাভবান হচ্ছে দেশের কৃষকরা।

আর এই সব পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত যেমন কাজ করছে কৃষি অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসগুলো। তেমনিভাবে কৃষক ও কৃষি সম্পর্কিত সমাজের সাধারণ মানুষদের নিয়ে ব্যতিক্রমী কাজ করে আসছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষিভিত্তিক একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন ‘সুফলা নওগাঁ’।

সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, সমাজসেবক, সমাজ সংগঠক, কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি অনুরাগী ও কৃষকসহ নানা পেশার মানুষদের নিয়ে ‘সবুজ মননে সবুজ সৃজন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে এই ব্যতিক্রমী সংগঠন ‘সুফলা নওগাঁ’। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে রাণীনগর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, কৃষক-কৃষাণীদের সমাবেশ, উচ্চ মূল্যের ফলের বাগান সৃজন, জৈব সার উৎপাদন ও প্রয়োগ, বিনামূল্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সবুজ মনের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব রতন নিজ উদ্যোগে এই সংগঠনটি তৈরি করেছেন। আধুনিক কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে সংগঠনটি বিভিন্ন সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে সবুজ জ্ঞানে সজীব ভ্রমণ নামের এক কৃষি ভ্রমণের আয়োজন করে আসছে। সম্প্রতি সংগঠনটি তার কৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি অনুরাগী ও সবুজ মনের কৃষকসহ ৩৮জন সদস্যদের নিয়ে নওগাঁর মান্দার শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর ভ্রমণ করেছেন। জাদুঘরের সভাকক্ষে ‘আমাদের কৃষি ঐতিহ্য: খাদ্য পুষ্টি ভাবনা’ বিষয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা জাহাঙ্গীর শাহের হাতে রাণীনগর উপজেলায় মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ আঁচ ও মাকু তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষি জাদুঘর প্রাঙ্গণে একটি পারুল ও মাল্টা গাছের চারা রোপন করা হয়।

সংগঠনের সদস্য কৃষি গবেষক মো. মুরাদ আলী বলেন, আমরা কৃষিপ্রধান দেশের মানুষ। কৃষি ছাড়া আমাদের ভাবনা অচল। তাই আমাদের কৃষিতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অনেক কিছুই যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকরা এই সব প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন সচেতন নয় এবং জানে না সঠিকভাবে প্রয়োগবিধি। আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের ও সমাজের কৃষি অনুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে কৃষি সম্পর্কিত বিখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণ করে থাকি যাতে কৃষক ও কৃষি অনুরাগী মানুষরা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আমি এই ব্যতিক্রমী সংগঠনের সদস্য হতে পেরে খুবই খুশি কারণ এই সংগঠনের সঙ্গে থাকতে পেরে কৃষি সম্পর্কিত নতুন নতুন অনেক কিছুই জানতে ও শিখতে পারছি যা আমার গবেষণা কাজে পাথেয় হিসেবে কাজ করছে।

সংগঠনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কৃষি উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। চাকরি শেষে আমার বাড়িতে কৃষি অফিসের ও সুফলা নওগাঁর উদ্যোগে স্থাপন করেছি অধিক মুনাফার মাল্টার বাগান। সেই থেকে আমি সুফলা নওগাঁর সঙ্গে আছি এবং যতদিন বেঁচে আছি ততোদিন থাকবো। আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে কৃষক ও সাধারণ মানুষদের একঘেঁয়েমী ফসলের চাষ করা থেকে বিরত রাখার এবং অল্প খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভজনক ফসলের চাষের দিকে আগ্রহী করার চেষ্টা করে আসছি। এক সময় এই সুফলা নওগাঁ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি আশাবাদী।

সুফলা নওগাঁর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আহসান হাবীব রতন ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সরকারের বেধে দেওয়া নিয়মনীতির মধ্যে থেকে কৃষক ও সাধারণ মানুষদের তেমনভাবে কৃষি বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া সাধারণ কৃষকরা কৃষির প্রতি তেমন আগ্রহী হয় না তাই সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের নিয়ে এই সংগঠনটি তৈরি করা হয়েছে। আমি চাকরির পাশাপাশি সংগঠনে সময় দিয়ে আসছি। আমার পাশাপাশি অনেক কৃষিপাগল মানুষ সংগঠনকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে তা থেকে বাস্তবজ্ঞান আহরণের চেষ্টা করা হয়। এতে করে তারা অধিক লাভজনক ফসল চাষের দিকে আগ্রহী হবেন। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার উৎপাদন, সঠিক প্রয়োগ ও তার উপকারিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবজ্ঞান অর্জন করতে পারছেন। শুধু কৃষিই নয়, সাধারণ কৃষকদের অধিক লাভজনক গবাদীপশু পালন বিষয়ে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান, বাড়ির উঠান ও ছাদ ফেলে না রেখে সেখানে লাভনক সবজি চাষসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে আমাদের সংগঠনের কর্মকাণ্ডের প্রতি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সদস্য হয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। আমি আশাবাদী এক সময় এই সংগঠনের সুফল সারা দেশের কৃষকরা ভোগ করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ভবিষ্যতে কৃষি ও কৃষকদের জন্য ভিন্ন কিছু করার এবং উদ্ভাবন করার জন্য যা কৃষি ও কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন