কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছেন মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

783

krishi-pic-1-(2)

এসএম জামাল, কৃষি প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সর্বত্রই আবাদ হচ্ছে বিষমুক্ত শাকসব্জি ও ফলমূল। এই আবাদের ফলে কুষ্টিয়ার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কৃষি উন্নয়নে সফল হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। মিরপুর উপজেলায় বিষমুক্ত শাকসবজি ও ফলমুল আবাদে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ।

শুধু কৃষির উন্নয়ন নয়, কৃষকের উন্নয়নেও অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে এই কৃষি কর্মকর্তা। এছাড়াও শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিতে যান্ত্রিককরণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধাবী জাতি হিসাবে তৈরি করতে সর্বস্তরে পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করা করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে তার ঝুলিতে মিলেছে সম্মাননা ক্রেস্টসহ সনদপত্র।

কৃষকের ফসল রক্ষায় ‘জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান’ যশোর অঞ্চলের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদন’ এ সেরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র উপস্থাপনেও তিনি শ্রেষ্টত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন।

পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষক মাঠ স্কুল থেকে বিজ্ঞান ভিত্তিক উপায়ে কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ মাধ্যমে কৃষক মাঠস্কুল সাবলম্বী করেছে উপজেলার অনেক কৃষককে। কৃষাণ-কৃষাণিরা কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রয়োগ করছেন মাঠে। যা গতি আনছে দারিদ্র্য মোচনে ও বদলাচ্ছে দিন। তাদের দেখে ওই পথেই হাঁটছেন আরো অনেক কৃষক।

krishi-pic-1

এছাড়াও গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে বিজ্ঞান সম্মতভাবে হাঁস-মুরগি, গাভী, ছাগল পালন, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করে বাড়তি আয়ের পথও দেখানো হয় এ স্কুলে।

এছাড়াও কৃষি যান্ত্রিকরণে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে মিরপুর উপজেলা। চিথলিয়া ইউনিয়নে যন্ত্র সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষক অর্ধেক খরচে যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোপন, কর্তন, মাড়াই বীজ বপন করতে পারছে। এতে একদিকে যেমন অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে ভরা মৌসুমে শ্রমিক সংকট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

কৃষি বিভাগ, কৃষক সমাবেশ, মাঠ দিবস ও কৃষক র‌্যালির মাধ্যমে তামাক চাষের বিকল্প ফসল আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদানসহ ডাল, তেলবীজ ও শস্য আবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন এই কর্মকর্তা।

কৃষকের পুষ্টি চাহিদা নিরসন কল্পে প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলবাগান করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রযুক্তি গ্রাম প্রদর্শনীর মাধ্যমে। তাছাড়াও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকরা পুষ্টি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করছেন।

উপজেলার চিথলিয়া ব্লকের চাষি তসলেম উদ্দিন অনেকটা হাসিভরা মুখে জানান, লাউ, কুমড়া, চালকুমড়া, পটল ও বেগুনসহ সব ধরনের সবজি অন্যান্য ফসলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভাবিত ফেরোমেন ট্রেপের ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতেন। আমরা প্রথমে তার কথা বিশ্বাস করতাম না। প্রথম দিকে মনে কিছুটা শঙ্কা নিয়ে ব্যবহার করলেও পরে ফল ভালো পাওয়ায় এখন অনেকটা এর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তার দেখাদেখি আরও অন্যান্য কৃষকেরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে পোকা দমন করে আসছে। একই উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা ব্লকের আশাননগর গ্রামের চাষিরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বীষমুক্ত কলা চাষে।

মারুফ হোসেন নামের এক অগ্রগামী কলা চাষী জানান, মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় সবরী কলার প্রদর্শণী স্থাপন করেছিলাম। যার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। গতবছর ৭ বিঘা জমিতে কলা চাষ করে এবং কলার ব্যগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ লাভবান হয়েছে।

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ কৃষিক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সব সময় দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

তিনি বলেন, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পরিবেশবান্ধব বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের নানা উপকরণ এবং অর্থ সহায়তা প্রদান করা হতো। ভার্মি কম্পোস্ট, ফেরোমেন সেক্স ফাঁদ, ভেষজ বালাইনাশকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কৃষকদের জন্য।
এছাড়ও কুল, তেতুল, বেল, আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, সজনীসহ নানান প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের চারা গ্রামে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে রোপন করেছি।

মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বিগত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উপজেলায় নিরাপদ উপায়ে সবজির আবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকারের কৃষি প্রণোদনার আওতায় কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বিতরণ, কৃষক সমাবেশ মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবুজ সার হিসাবে ধৈঞ্চার আবাদ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চার আবাদ হয়েছে যা মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই বছরে উপজেলাটিতে ১৩০ জন কৃষক কেঁচো সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে সাবলম্বী হয়েছে। এই জৈব সারটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের হওয়াতে এবং মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় সকল ফসল আবাদে এটির ব্যবহারে কৃষক উৎসাহিত হচ্ছে।

এছাড়াও উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ, কৃষি বিসয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শন প্রভৃতি সম্প্রসারণ মূলক কর্মকান্ডের কারণে নিরাপদ উপায়ে ফসল চাষ সম্প্রসাণসহ কৃষকের ভাগ্যোন্নয় নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি।

তিনি আরও জানান, বজ্রপাত হতে রক্ষা পেতে উপজেলার ৪০টি ব্লকে ২০ হাজার তালের বীজ ও খেজুরের চারা রোপন করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কীটনাশক দিয়ে সবজি উৎপাদনের ক্ষতিকর বিষয়ে অধিক উৎপাদিত এলাকার কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং বিষমুক্ত উপায়ে কৃষকরা যেন সবজি উৎপাদন করতে পারে তার জন্য বেশি বেশি করে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে করে আরও বেশি বেশি করে সবজিসহ ফলমূল ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

পাবনায় অদ্ভুত প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান

ধান চাষে পরিবেশবান্ধব বায়ো-অর্গানিক সার উদ্ভাবন

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম