তবিবর রহমান, যশোর থেকে: শাকসবজি বা ফলমূল বিষমুক্ত করার ‘ফুড কেয়ার’ নামক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন যশোরের কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম মৃধা।
একটু বড় আকৃতির মেশিনে ৩০ মিনিটে ৩০ কেজি শাকসবজি বা ফলমূল থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও জীবাণু দূর করছে এ যন্ত্রটি। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সেটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন বায়োলজিক্যাল সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ।
আর এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথম বলেছেন যশোরের কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ। যা ব্যবহার করে সবজি জোন খ্যাত যশোরের কৃষক ও ভোক্তারা উপকৃত হতে পারবেন।
উদ্ভাবক সিরাজুল ইসলাম মৃধার বাড়ি যশোর শহরের নাজির শংকরপুর কোল্ড স্টোর মোড়ে। এর আগে মাটি ছাড়া ঘাস চাষ করে সাড়া ফেলেন এই কৃষিবিদ।
উদ্ভাবক সিরাজুল ইসলাম মৃধা জানান, উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে বাতাস থেকে ইলেকট্রিক সার্কিটের সহযোগিতায় ওজন গ্যাস তৈরি হয়। যা যন্ত্রের বর্হিগমন পাইপের মাধ্যমে স্বচ্ছ পানিতে রাখা শাকসবজি, ফলমূলে থাকা সালমন এলা, ইকোলাইসহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাসসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দূর করে। এছাড়াও মাংশের ভেতর থাকা অপ্রয়োজনীয় চর্বিও ওজন গ্যাসের মাধ্যমে পৃথক করা সম্ভব।
সিরাজুল ইসলাম জানান, উন্নত দেশগুলোতে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূরীকরণে ওজন গ্যাস ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু ওই সব দেশে ব্যবহৃত ভাল মানের যন্ত্রের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে মান অক্ষুন্ন রেখে যন্ত্রটিকে সাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেশকিছু সহজলভ্য প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য ছোট সাইজের মেশিনে প্রতিবারে ৩ কেজি শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাত্র ৩০ মিনিট। আর বড় সাইজের মেশিনে (যারা কারখানা, হোটেল-রোস্তারায় ব্যবহার করবে) ৩০ মিনিটে ৩০ কেজি শাকসবজি ও ফল বিষমুক্ত করতে পারবেন। ছোট আকারের ফুড কেয়ার যন্ত্রটির খরচ পড়বে প্রায় ৮ হাজার টাকা। আর বড় আকৃতির নির্মিত যন্ত্রটির খরচ পড়বে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বড় সমস্যা হলো নিরাপদ খাদ্য। আর এ নিরাপদ খাদ্যের অন্তরায় অধিক ফলনশীল খাদ্য উৎপাদনে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ও সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ফরমালিনের ব্যবহার। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমার ফুড কেয়ার যন্ত্রের উদ্ভাবন।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্টে যদি এই মেশিন দ্বারা খাদ্যের বিষমুক্ত করে নেওয়া যায় তাহলে দেশের মানুষ অনেকাংশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে পারবে।
তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন দেশের প্রত্যেক রান্না ঘরে এই ফুড কেয়ার পৌঁছে দেব, যাতে মানুষ সুস্থ থাকতে পারে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে তার ওজন জেনারেটর ফুড কেয়ার যন্ত্রেও পরীক্ষাতে দেখা গেছে, যন্ত্রটি দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটেই ফল ও শাক সবজি থেকে বিষমুক্ত করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সাইন্স অ্যাড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির ডিন ড. মো. ইকবাল কবির জাহিদ মুঠোফোনে বলেন, আমি যন্ত্রটি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি যন্ত্রটি দ্বারা ওজনের মাধ্যমে অক্সিজেনে রপান্তর করে যে ট্রিটমেন্ট হয় তাতে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মাইক্রোঅর্গানিজম ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে যন্ত্রটি দিয়ে খুব সহজে ফল ও সবুজ শাক সবজি টাটকা করতে পারে।
তিনি বলেন, একই পদ্ধতি ব্যবহারে শাকসবজি, ফলমূল দ্রুত পচনের হাত থেকেও রক্ষা পাবে। আমাদের দেশে এ পদ্ধতি ব্যবহার হতে দেখা যায়নি। ভারত ও ইউরোপের দেশগুলোতে এর ব্যবহার হয়।
তিনি বলেন, এ যন্ত্রের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্যর কোন ক্ষতি হবে না। সিরাজুল ইসলাম মৃধার উদ্ভাবনটি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে এ গবেষক বলে, সরকারের কাছে নিজেই এ ব্যাপারটি তুলবেন। যাতে সিরাজুল ইসলাম মৃধা তার উদ্ভাবনী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, শাকসবজি কিংবা ফলমূল সংরক্ষণ অথবা পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি বড় অংশই নষ্ট হয়। কিন্তু ওজন গ্যাস পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হবেন। যা কৃষি প্রধান এদেশের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে এ যন্ত্রটি বাজারজাত করা হলে কৃষক ও বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা যাবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম